ভারতের আইআইটি হায়দরাবাদে পিএইচডি করছেন মো. আবুল হাসানাত। বাংলাদেশের এক সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর অসাধারণ ইচ্ছাশক্তির গল্প হলো তাঁর জীবন। ছোট ছোট অনেক পদক্ষেপের সমষ্টিই তাঁকে এনে দিয়েছে আজকের এই অবস্থান।
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে পুরকৌশলে স্নাতক করেছেন আবুল হাসানাত। তখন থেকেই তিনি কোচিং সেন্টারে বিজ্ঞান ও গণিত পড়াতেন। শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ানো আর নিজের চিন্তা ভাগাভাগি করা তাঁকে শিক্ষকতার প্রতি একধরনের ভালোবাসা তৈরি করে দেয়।
স্নাতক শেষের আগেই তিনি ঢাকা ওয়াসার একটি প্রকল্পে জুনিয়র সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। কাজটি করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠানের হয়ে। শহরের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো বাস্তব জটিলতায় কাজ করতে গিয়ে তাঁর মধ্যে গবেষণার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
চাকরির পাশাপাশি মাস্টার্স শুরু করেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট)। প্রতিদিন ঢাকার ব্যস্ততা আর যানজট পেরিয়ে গাজীপুরে যাওয়া–আসার কষ্টকে মেনে নিয়েই তিনি চালিয়ে যান নিজের পড়ালেখা। তাঁর মাস্টার্সের সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক গণেশচন্দ্র সাহা এবং কো-সুপারভাইজার ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান। তাঁদের অনুপ্রেরণায় তিনি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
শুধু পড়ালেখা বা চাকরি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত ছিল শিক্ষকতাও। ডুয়েটে পড়া অবস্থাতেই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। পাশাপাশি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ ও বিএএফ শাহীন কলেজ কুর্মিটোলায়ও শিক্ষকতা করেছেন। এমন সময়ও গেছে, যখন একসঙ্গে তিনটি চাকরি করেছেন—যদিও সময়টা ছিল মাত্র এক বছর।
পরে পিএইচডি করার সিদ্ধান্ত নেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি হন। এখানে তাঁর সুপারভাইজার ছিলেন অধ্যাপক আশরাফ আলী—যিনি আবার তাঁর মাস্টার্সের সুপারভাইজারেরও সুপারভাইজার ছিলেন।
এরই মধ্যে ভারতের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পাওয়ায় তিনি বুয়েট ছেড়ে চলে যান আইআইটি হায়দরাবাদে। বর্তমানে সেখানেই পিএইচডির শেষ ধাপে রয়েছেন। শিক্ষকের সহকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি পেয়েছেন গবেষণা উপস্থাপনার সুযোগও। ২০২৪ সালে আইআইটি হায়দরাবাদের অর্থায়নে গ্রিস, জার্মানি এবং ভারতের তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে চারটি গবেষণা উপস্থাপন করেন তিনি। একটি গবেষণায় অর্জন করেছেন ‘সেরা গবেষণা পোস্টার’ পুরস্কারও।
আবুল হাসানাতের এই পথচলা আমাদের শেখায়, সাধনার সঙ্গে সৎ চেষ্টা থাকলে সাফল্য শুধু সময়ের ব্যাপার। তাঁর গল্পটি হাজারো শিক্ষার্থীকে সাহস যোগাতে পারে—যারা সীমিত সুযোগেও বড় স্বপ্ন দেখে। এখন তাঁর লক্ষ্য আরও বড়, আরও গভীর গবেষণায় অবদান রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা।