ঢাকা উত্তরে কোরবানির হাট বসতে বাকি মাত্র ৩ দিন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি অধিকাংশ ইজারা

News Desk

ঢাকা উত্তরে কোরবানির হাট বসতে বাকি মাত্র ৩ দিন, এখনো চূড়ান্ত হয়নি অধিকাংশ ইজারা. Dhakainlight.com

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকায় কোরবানির পশুর হাট বসার কথা ৩ জুন থেকে, কারণ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঈদের তারিখ নির্ধারণ করেছে ৭ জুন। অথচ ঢাকার উত্তরে ১০টি অস্থায়ী হাটের মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র দুটি হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে পেরেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ফলে মাত্র তিনদিন হাতে রেখেই হাট বসানোর প্রস্তুতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দরদাতারা।

ডিএনসিসির তথ্য অনুযায়ী, ১০টি অস্থায়ী হাটের সঙ্গে একটি স্থায়ী হাট গাবতলীকে ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেগুলোর ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো—মস্তুল চেকপোস্ট–সংলগ্ন খালি জায়গা এবং তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক মাঠ। মস্তুল হাটটি ১ কোটি ৫১ লাখ টাকায় ইজারা পেয়েছে সুরমি এন্টারপ্রাইজ, আর পলিটেকনিক হাটটি ২ কোটি ১৭ লাখ টাকায় পেয়েছে জায়ান এন্টারপ্রাইজ।

দ্বিতীয় দফায় দর আহ্বান করেও কালশী বালুর মাঠের হাটের জন্য কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া যায়নি। সরকারি নির্ধারিত দর ৮০ লাখ টাকার বিপরীতে সর্বোচ্চ দর এসেছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা। ফলে এই হাটের জন্য তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের ক্ষেত্রে, ১০ কোটি ১ লাখ টাকা দর দিয়ে এসএম ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে থাকলেও, তারা দরপত্রের সঙ্গে পে-অর্ডারের মূল কপির বদলে ফটোকপি জমা দেওয়ায় তা বাতিলের আশঙ্কায় রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা চায়না বাংলা ট্রেডার্স বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছে। বিষয়টি এখন প্রশাসকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।

মিরপুর-৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিং হাটে দ্বিতীয় দফায় সোহাগ এন্টারপ্রাইজ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দর দেয়, যেখানে সরকারি দর ছিল ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম দফায় একই দর দেওয়া মার্সি করপোরেশন দ্বিতীয় দফায় পিছিয়ে পড়ে ২ কোটি ২২ লাখ টাকায়।

ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে হাটের জন্য সরকার নির্ধারিত দর ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং একমাত্র দরদাতা ঠিক এই পরিমাণেই দর জমা দেয়। মোহাম্মদপুরের বছিলা হাটের জন্য আহাদ এন্টারপ্রাইজ ২ কোটি ৭১ লাখ টাকার দর দেয়, যেখানে সরকারি দর ছিল ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। রানাভোলা অ্যাভিনিউয়ের হাটের জন্য আতিকুর রহমান অ্যান্ড কোং ৯৫ লাখ ২১ হাজার টাকার দর দেয়, সরকারি দর ছিল ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

দ্বিতীয় দফায় যুক্ত হওয়া দুটি নতুন হাটের মধ্যে খিলক্ষেত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের হাটে ক্ল্যাসিক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ১ কোটি ৫১ লাখ টাকার দর দেয়, যেখানে সরকারি দর ছিল মাত্র ৫০ লাখ টাকা। কাঁককুড়া বাজার সংলগ্ন রহমাননগর হাটে আরহাম এন্টারপ্রাইজ ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকার দর দেয়, সরকারি দর ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এত বিলম্বের ফলে ইজারাদাররা প্রস্তুতির সময় পাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, হাট বসানোর জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় প্রয়োজন, পাশাপাশি প্রচারণা ও দেশজুড়ে পাইকারদের আগাম জানানোর বিষয়টিও জরুরি। অথচ এখনো ইজারা না হওয়ায় কোনো প্রস্তুতিই শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ বছর হাটের প্রস্তুতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইজারাপ্রত্যাশী বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে ইজারা চূড়ান্ত হয়ে যেত, এবার দেরির কারণে সবাই বিপাকে পড়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটির কোরবানির হাটগুলো নিয়ে এই অনিশ্চয়তা ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রস্তুতির ঘাটতি হাটের কার্যকারিতা এবং সাধারণ মানুষের পশু কেনাবেচার সুবিধাকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Footer Section