ডেভিড অ্যাটেনবরো’র ৯৯তম জন্মদিনে মুক্তি পেল ‘Ocean’, সমুদ্র রক্ষায় নতুন বার্তা

News Desk

৯৯ বছরে পা দিলেন বিশ্ববিখ্যাত প্রকৃতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উপস্থাপক স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো। এই বিশেষ দিনে মুক্তি পেল তাঁর নতুন প্রামাণ্যচিত্র “Ocean”, যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান—সমুদ্র।

চলচ্চিত্রটির শুরুতেই অ্যাটেনবরো বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভূমিতে নয়, জলে।”

এই ডকুমেন্টারিটি রঙিন প্রবাল প্রাচীর থেকে শুরু করে গভীর সমুদ্র ও কেল্প ফরেস্টের বিস্ময়কর জগতে নিয়ে যায় দর্শকদের। এতে উঠে এসেছে সমুদ্রের বৈচিত্র্য ও কীভাবে এটি আমাদের জলবায়ু রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে—বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন সিঙ্ক হিসেবে।

অ্যাটেনবরো জানান, তাঁর জীবদ্দশায় সমুদ্র নিয়ে মানুষের জ্ঞান ও উপলব্ধিতে এসেছে বিপুল পরিবর্তন। জানা গেছে অসংখ্য নতুন প্রজাতির সন্ধান, বিস্ময়কর পরিব্রাজন ও জটিল ইকোসিস্টেমের কথা, যা আগে কল্পনাও করা যেত না।

তবে ডকুমেন্টারিটি আশার আলো দেখালেও সমুদ্রের সামনে বিরাট হুমকির কথাও তুলে ধরেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হচ্ছে প্রবাল প্রাচীর, সৃষ্টি হয়েছে “প্রবাল গোরস্থান”। তাছাড়া শিল্প-ভিত্তিক মৎস্য আহরণের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে এতে—যেখানে নীচে শিকল টেনে পুরো সামুদ্রিক জীবজগৎ ধ্বংস করে তোলা হচ্ছে। অ্যাটেনবরোর ভাষায়, “এটি সবচেয়ে অপচয়পূর্ণ মাছ ধরার পদ্ধতি।”

এই প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলবর্তী ছোট মৎস্যজীবী সম্প্রদায়গুলো। অ্যাটেনবরো একে বলছেন “আধুনিক উপনিবেশবাদ”।

তবুও আশাবাদী অ্যাটেনবরো। কারণ, যখন সমুদ্রকে পুনরুদ্ধারের সুযোগ দেওয়া হয়, তখন সেটি আশ্চর্যজনকভাবে ফিরে আসে। কিরিবাস, পলাউ ও ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া প্রদেশে যেখানে প্রবাল ভেঙে পড়েছিল, এখন আবার জীবন ফিরে এসেছে। হাওয়াইয়ের উপকূলে Papahānaumokuākea নামক বিশ্বের সবচেয়ে বড় নো-ফিশিং জোনেও মাছের সংখ্যা বেড়েছে, পাখিরাও ফিরেছে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের Pristine Seas প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা এবং ছবির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা এনরিক সালা জানান, “মাছ থাকলে তারা প্রবালকে পরিষ্কার রাখে, এতে প্রবালও ফিরে আসে।”

তাঁর মতে, সমুদ্রের সামনে তিনটি বড় হুমকি—জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাস্টিক দূষণ ও অতিরিক্ত মাছ ধরা। এর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত সমাধানযোগ্য হলো অতিরিক্ত মাছ ধরা। তিনি বলেন, “আজ যদি আমরা একটি অঞ্চলে মাছ ধরা বন্ধ করি, কাল থেকেই সিস্টেম পুনরুদ্ধার হতে শুরু করবে।”

তবে ডকুমেন্টারিটি স্পষ্ট বার্তা দেয়—সব মাছ ধরা খারাপ নয়। তবে কিছু অঞ্চলকে সম্পূর্ণ সংরক্ষিত রাখতে হবে। বর্তমানে মাত্র ৩% সমুদ্র সম্পূর্ণ সংরক্ষিত, যা অবশ্যই বাড়াতে হবে।

চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে জুন মাসে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের মহাসমুদ্র সম্মেলনের আগে, যাতে এটি বিশ্বনেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যেই কাগজে কলমে সম্মত হয়েছে ৩০% মহাসাগর সংরক্ষণের জন্য, কিন্তু বাস্তবায়নে ধীরগতি চলছে।

অ্যাটেনবরোর কথায়, “এটাই হতে পারে পরিবর্তনের মুহূর্ত। এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো—এই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।”

বিশ্ব যখন জলবায়ু ও পরিবেশ সংকটে, তখন “Ocean” যেন এক আশার বার্তা—সমুদ্রকে যদি সময় ও স্থান দেওয়া হয়, সে নিজেই নিজের জীবন ফিরিয়ে আনতে পারে।

Leave a Comment

Footer Section