শোক, অপ্রত্যাশিত অনুপ্রেরণা এবং রন্ধন ইতিহাস তৈরি
ডমিনিক ক্রেন, তিন মিশেলিন স্টার অর্জনকারী প্রথম নারী শেফ, ইতিমধ্যেই রন্ধনজগতের একজন কিংবদন্তি। তবে তার জন্য সেরা স্বীকৃতি পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জন্য কিছু দেওয়া।
তিনি বলেছেন, “আমি চাই আমাকে একজন মানব হিসেবে মনে রাখা হোক, যে ফিরে দিয়েছে।” এবং তিনি সত্যিই তা করেছেন, কোভিড মহামারির সময় তার একটি রেস্টুরেন্ট কমিউনিটি কিচেনে রূপান্তরিত করেছিলেন, হাইতির কৃষকদের সাহায্য করতে একটি উদ্যোগ তৈরি করেছিলেন এবং ফ্যাক্টরি ফার্মিংয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন।
তার যাত্রা সহজ ছিল না। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, সান ফ্রান্সিসকোতে CNN এর কিয়াং লাহ-এর সঙ্গে এক আন্তরিক কথোপকথনে তিনি নিজের শোকের অভিজ্ঞতা, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে তার লড়াই এবং উভয় ঘটনাতেই যে শক্তিশালী পাঠগুলি তিনি শিখেছেন তা শেয়ার করেছেন।
প্যারিসের কাছে ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করা ডমিনিক ক্রেনকে শিশু হিসেবে তার পিতা-মাতার দ্বারা দত্তক নেওয়া হয়েছিল। তার মা ছিলেন একজন আর্থিক কর্মকর্তা এবং তার বাবা ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তার বাবা-মা উভয়ই ব্রেটনি অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন, যা ফ্রান্সের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত। ক্রেন তার শৈশবের অনেক সময় সেখানে কাটিয়েছিলেন এবং তিনি তার খাবার প্রস্তুতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক অনুভব করেন।
এতসব সাফল্যের পরেও, তিনি কখনও একজন শেফ হওয়ার পরিকল্পনা করেননি। প্যারিসে অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায় ডিগ্রি অর্জন করার পর, তার স্বপ্ন ছিল একজন ফটোগ্রাফার হওয়া। কিন্তু ফ্রান্সের প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা তাকে মুক্তির পথে আসতে বাধা দিচ্ছিল।
একটি পরিবর্তন খুঁজতে তিনি সান ফ্রান্সিসকো চলে আসেন। সেখানে তিনি একটি নতুন জীবন শুরু করেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই, শুধুমাত্র একটি নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি নিয়ে। সান ফ্রান্সিসকো তাকে গ্রহণ করেছিল, এবং এখানে তার জীবনের এক নতুন দিকের সূচনা হয়।
তার রান্নার প্রতি ভালোবাসা সবসময় ছিল, এবং তিনি তা তার মায়ের এবং দাদীর সাথে রান্না করার মাধ্যমে অনুভব করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেরেমিয়া টাওয়ারের ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট স্টার্স-এ কাজ করেন, যেখানে তিনি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছিলেন।
২০১১ সালে, তার প্রথম রেস্টুরেন্ট অ্যাটেলিয়ার ক্রেন খুলেন। ২০১৮ সালে এটি তিনটি মিশেলিন স্টার অর্জন করে, যা রন্ধন জগতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা।
তিনটি মিশেলিন স্টার পাওয়ার পর, ডমিনিক ক্রেন বুঝতে পারেন যে, এই পুরস্কারগুলি তার নিজের নয়, বরং এটি অন্যদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার সুযোগ।
২০২০ সালের শেষে, ১৬ রাউন্ড কেমোথেরাপি শেষে, ক্রেন ক্যান্সার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে তার জীবনে আরও এক বড় ধাক্কা আসে, যখন ২০২৩ সালে তার মা মারা যান।
তার মা মারা যাওয়ার সময়, তিনি তাকে বলেছিলেন, “তোমাকে মনে রাখতে হবে যে তুমি কাঁদতে পারো, কিন্তু তোমার অশ্রু যেন আনন্দের অশ্রু হয়। মনে রেখো, আমি সবসময় তোমার সাথে থাকব।”
ডমিনিক ক্রেন তার মায়ের স্মৃতিকে জীবিত রাখেন তার খাবারের মাধ্যমে, যার মধ্যে একটি বিশেষ মেনু তৈরি করা হয়েছে, যা তার মা’র প্রতি ভালোবাসা ও শোকের প্রতিফলন।
৬০ বছর পূর্ণ করার পর, ক্রেন ২০২৫ সালকে এক ধরনের রূপান্তরের বছর হিসেবে দেখছেন। “যখন আপনি ক্যান্সার পার করেন, তখন এটি এক ধরনের পুনর্জন্মের অনুভূতি দেয়,” তিনি বলেন। “এটি আপনার নিজের খোঁজ পাওয়ার বছর।”
তিনি বিশ্বাস করেন, খাবার কখনও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে না, কারণ এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান ধারণ করে এবং এটি আমাদের ঐতিহ্যকে জীবিত রাখে।
