ফারহানা ইসলাম ও মহিউদ্দিন সরকার সম্পর্কে মামি-ভাগনে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত দাবি করে গত রোববার তাঁরা সহায়তার টাকা নিতে গিয়েছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে। কিন্তু সেখানে তাঁদের প্রতারণার চেষ্টাটি ধরা পড়ে যায়।
ফারহানা ও মহিউদ্দিন চিকিৎসার নথিপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু যাচাই করে দেখা যায়, তাঁরা দুজনে যে এক্স-রে রিপোর্ট দিয়েছেন, তা হুবহু এক।
পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ফারহানা ও মহিউদ্দিন স্বীকার করেন, তাঁরা আন্দোলনে আহতই হননি। চিকিৎসাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছেন ফারহানা ইসলামের স্বামী নাজিরুল বাশার। নাজিরুল কেরানীগঞ্জের নিউ লাইফ জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের একজন।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের এভাবে অনেকেই সহায়তার জন্য যাচ্ছেন, যাঁদের কেউ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত, কেউ গাছ থেকে ফেলা ডাবের আঘাতে আহত, কেউ পড়ে গিয়ে আহত। কিন্তু দাবি করছেন, তাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত হয়েছেন।
প্রতারণার ঘটনায় রাজধানীর রমনা থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। কারও কারও কাছ থেকে দায় স্বীকারের লিখিত বক্তব্য রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা ৫০টির মতো প্রতারণার ঘটনা পেয়েছেন। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাঠানো ১৯৯টি আবেদনের নথির মধ্যে ১৫৬টি সঠিক নয় বলে মনে করছেন কর্মরতরা। আবেদনগুলো যাচাই করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যাচাই–বাছাইয়ের ফাঁক গলে কেউ কেউ টাকাও নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত তিনজন প্রতারকের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ফেরত আনা হয়েছে।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও জুলাইয়ে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিতই জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনা শনাক্ত হচ্ছে। যাচাই–বাছাই করে আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের তালিকা করা হলে প্রতারকদের পক্ষে আর প্রতারণা করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ফাউন্ডেশনের জনবলের স্বল্পতা আছে। আবেদনকারীদের সবার তথ্য যাচাই করতে গিয়ে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে বিলম্ব হচ্ছে। ফাউন্ডেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের তালিকায় নাম তোলার আগে যাচাই–বাছাই করে জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল। গতকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) শহীদ হিসেবে ৮৩৪ জন এবং আহত ১২ হাজার ৪৯ জনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে সহায়তার জন্য আবেদন করতে এমআইএসে নাম থাকতে হয়।
ফাউন্ডেশন থেকে এখন পর্যন্ত ৬৮৬ জন শহীদের পরিবারকে এবং ৩ হাজার ৭১৯ জন আহত ব্যক্তিকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের সরকার সহায়তা দেবে। অন্যদিকে ফাউন্ডেশন থেকেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলা হয়।
প্রতারণার নানা কৌশল