জিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে

News Desk

জিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে. Dhakainlight.com

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে দিন দিন বাড়ছে বিতর্ক। জিম্মিদের জীবিত ফিরিয়ে আনার চেয়ে গাজায় তথাকথিত ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে—এমন অবস্থানকে ঘিরে ইসরায়েলি সমাজে তীব্র বিভক্তি তৈরি হয়েছে।

যুদ্ধ না জিম্মি—কোনটা আগে?
হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির চেয়ে গাজা দখল ও হামাসকে পরাজিত করার নীতিই নেতানিয়াহু সরকারের প্রাধান্য পাচ্ছে। গত মার্চে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি বাতিলের ফলে জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে গেছে। এতে জনগণের ক্ষোভ বেড়েছে এবং রাজপথে নেমে এসেছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।

ভেতরে-বাইরে চাপের মুখে নেতানিয়াহু
প্রথমত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের বিস্ময়কর হামলা ঠেকাতে না পারার ব্যর্থতা; দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া; তৃতীয়ত, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনার রূপরেখা অনুপস্থিত থাকা—এই তিনটি ইস্যুতে নেতানিয়াহু এখন চরম চাপের মুখে।

সামরিক বাহিনীর অনেক ইউনিট খোলাচিঠিতে সরকারের অগ্রাধিকারে প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ব্যক্তিগত স্বার্থে’ যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলার বিচার চলছে। তারই মাঝে ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ পরিস্থিতি তৈরি করে তিনি নিজের অবস্থান সংহত করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। লন্ডনের চাথাম হাউসের অধ্যাপক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, ‘এই যুদ্ধ এখন আর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।’

জিম্মিদের উৎসর্গ: নৈতিক সংকট
কিছু কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলছেন—‘সামরিক সাফল্যের বিনিময়ে’ জিম্মিদের উৎসর্গ করা যেতে পারে। এটা ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালা ও ইহুদি ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী বলে মনে করছেন অনেকে।

রিজার্ভ সেনাদের অনাগ্রহ
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে রিজার্ভ সদস্যদের অনেকেই আর সাড়া দিচ্ছেন না। সরকারি হিসাবে ৮০% রিজার্ভ সেনা সাড়া দিলেও, মিডিয়া সূত্র বলছে বাস্তব সংখ্যা ৬০ শতাংশের আশপাশে। যারা সাড়া দিচ্ছেন না, তাঁদের একটা বড় অংশ ‘গ্রে রিফিউজার’ নামে পরিচিত—তাঁরা যুদ্ধের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও বারবার ডাকা হওয়া ও পেশাগত জীবনে বাধার কারণে বিরক্ত।

ধর্মীয় ও সামাজিক বিভক্তি
নেতানিয়াহুর ওপর নির্ভরশীল হারেদি (অলট্রা-অর্থোডক্স) ইহুদিরা সেনাবাহিনীতে যোগদান না করেও বহু বছর ধরে ছাড় পেয়ে এসেছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই ছাড় বাতিল করায় তাদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই ধর্মীয় বিভক্তি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

যুদ্ধ অবসানের আশা ক্ষীণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সাময়িক সাফল্য এলেও গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, উত্তরের সীমান্ত রক্ষা, ইরান মোকাবিলা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা একসঙ্গে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক সেথ ক্রামরিচ বলেন, ‘ওরা আদৌ ওই ভূখণ্ড দখল করে রাখতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ আছে।’

এক দীর্ঘ যুদ্ধের পথে ইসরায়েল?
নেতানিয়াহুর ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়ের’ লক্ষ্য আদৌ বাস্তবসম্মত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক বিভক্তি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, ইসরায়েল এক অন্তহীন যুদ্ধের ফাঁদে আটকে পড়ছে, যা সমাজে বিভাজন বাড়িয়ে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থানকে সংহত করছে।

শেষ কথা

Leave a Comment

Footer Section