ছোট্ট রদিয়ার লাল জামার হাসি এখন শুধুই অতীত

News Desk

ছোট্ট রদিয়ার লাল জামার হাসি এখন শুধুই অতীত. Dhakainlight.com

চার বছরের নিষ্পাপ শিশু মোছা. রদিয়া আকতার (রুহি)—যে কিছুদিন আগেই লাল রঙের টুকটুকে জামা পরে একটি ছবি তুলেছিল, সেই ছবিটি এখন কেবল হৃদয়বিদারক এক স্মৃতি হয়ে আছে। নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার হেমাইল গ্রামের একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তার বস্তাবন্দী অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

নিহত রদিয়া কালাই উপজেলার আবদুর রহমান ও তাঁর সাবেক স্ত্রী আরজিনা খাতুনের কন্যা। মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পর সে মায়ের সঙ্গে নানা বাড়িতে থাকত, কিন্তু মাঝে মাঝে বাবার বাড়িতে যেত। গত ২৪ মে সকালে দাদির সঙ্গে দেখা করতে বাবার বাড়িতে গিয়ে আর ফেরেনি। পরদিনই রদিয়ার বাবা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

তদন্তের একপর্যায়ে শুক্রবার রাতে বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলে স্থানীয়রা বিষয়টি থানায় জানায়। পুলিশ এসে ট্যাংকের ঢাকনা খুলে বস্তাবন্দী অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে, যা রদিয়ার বলে শনাক্ত করা হয়।

এই ঘটনায় রদিয়ার সৎমা সোনিয়া খাতুন, তার বাবা মো. জিয়া এবং রদিয়ার চাচা মো. রনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, রদিয়ার মা ও নানাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

শিশুটির মা আরজিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা আমার নিষ্পাপ মেয়েকে পাষণ্ডের মতো হত্যা করেছে। পাপকাজ পাহাড় দিয়েও ঢাকা যায় না। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে তিন-চার দিন আগে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখা হয়। তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই ঘটনা শুধু এক শিশুর মর্মান্তিক পরিণতি নয়, বরং সমাজে নেমে আসা নৈতিক অবক্ষয়ের এক নির্মম চিত্র। চার বছরের নিষ্পাপ মুখটিকে আর কেউ দেখতে পাবে না, শুধু থাকবে সেই লাল জামার ছবিটি—যা কেবল শোক আর চোখের জলই স্মরণ করিয়ে দেবে।

Footer Section