চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে এক নারীকে পেছন থেকে লাথি মেরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হওয়া জামায়াতে ইসলামীর বহিষ্কৃত কর্মী আকাশ চৌধুরী জামিন পেয়েছেন। আজ বুধবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। তবে শর্তসাপেক্ষে তাঁকে আগামী ১৫ জুন থেকে প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
গত রোববার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আকাশ চৌধুরীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন জানান, জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতের শর্ত অনুযায়ী, আকাশ চৌধুরীকে নিয়মিত আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ২৯ মে, যখন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করে। একই সময়ে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ নামে আরেকটি গোষ্ঠী সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। তখন ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র লোকজন ছাত্র জোটের ওপর হামলা চালায়, যাতে অন্তত ১২ জন আহত হন।
এই সময়ের একটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় আকাশ চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি দুইজনকে পেছন থেকে লাথি মারছেন, যাঁদের একজন নারী। ভিডিওটি ১৫ সেকেন্ডের হলেও তা দেশব্যাপী ক্ষোভ ও নিন্দার জন্ম দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের পাশে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন ছাত্র জোটের কর্মীরা। সেখানে পুলিশের উপস্থিতির মাঝেও আকাশ চৌধুরী পেছন থেকে হামলা করেন।
পরে ৩০ মে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে জানায়, ঘটনার পরপরই আকাশ চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের আচরণ দলের নীতির পরিপন্থী।
ঘটনার দিন কোতোয়ালি থানা পুলিশ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে। মামলায় ওবাইদুর ও সেলিম নামে দুই ব্যক্তিকে নামসহ এবং অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করা হয়।
ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে আকাশ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গ্রেপ্তার ও জামিন পর্যন্ত এই ঘটনা এখন জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। মানবাধিকার কর্মী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন নারীর প্রতি এই সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
