চিকিৎসক মায়ের ৯ সন্তান একসঙ্গে নিহত, গাজার হৃদয়বিদারক বাস্তবতা

News Desk

চিকিৎসক মায়ের ৯ সন্তান একসঙ্গে নিহত, গাজার হৃদয়বিদারক বাস্তবতা. Dhakainlight.com

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের এক আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ গেল ফিলিস্তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলা আল-নাজ্জারের ৯ সন্তানের। শুক্রবার সকালে তিনি গাজার নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনে যান। বাড়িতে রেখে যান তাঁর ১০ সন্তানকে। কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালেই এসে পৌঁছায় তাঁর সাত সন্তানের দগ্ধ মরদেহ। বাকি দুজনের মরদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয় পরদিন সকাল পর্যন্ত। হামলায় আহত হয়েছে তাঁর একমাত্র জীবিত সন্তান আদম (১১)। গুরুতর আহত হয়েছেন স্বামী, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক।

হৃদয়বিদারক এ ঘটনা গাজার সিভিল ডিফেন্স এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। আলা আল-নাজ্জারের পরিবার বসবাস করত খান ইউনিসের একটি আবাসিক ভবনে, যেটি শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হয়। আইডিএফ জানায়, তাদের সেনাদের কাছাকাছি অবস্থান করা কিছু সন্দেহভাজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। তবে এ ঘটনায় বেসামরিক প্রাণহানি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় তারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রকাশিত ভিডিও ও প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারকর্মীরা শিশুদের মরদেহ বের করে কাপড়ে মুড়িয়ে নিচ্ছেন। মর্মান্তিক এ ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র আদম নামের এক শিশু প্রাণে বেঁচে যায়। তাকে এবং তার বাবাকে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

এই ঘটনার পরও আলা আল-নাজ্জার তাঁর দায়িত্ব পালন বন্ধ করেননি। সহকর্মীরা জানান, তিনি এখনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে গিয়ে স্বামী ও আহত সন্তানের পাশে দাঁড়ান। তার সহকর্মী ডা. আহমদ আল-ফারা বলেন, ‘নিজের ৯ সন্তান হারানোর পরও তিনি মাথা নিচু না করে দাঁড়িয়ে আছেন—এ এক অবিশ্বাস্য মানসিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ।’

নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স, যেখানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন, গাজার অন্যতম প্রধান হাসপাতাল। সেখানে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে শিশুদের জন্য নিরলস সেবা দিচ্ছেন এই মা। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনা শুধু একজন চিকিৎসকের নয়, পুরো ফিলিস্তিনের চিকিৎসক সম্প্রদায়ের দুর্দশার প্রতীক।

৩৮ বছর বয়সী এই নারী চিকিৎসক, যিনি মূলত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, তিনিও এখন অন্য অনেক চিকিৎসকের মতো জীবন-মৃত্যুর চাপে জরুরি বিভাগে সেবা দিয়ে চলেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ ও দৃঢ়তা গাজার মানুষের জন্য সাহস ও বেদনার এক মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে, এই ঘটনা তার এক নির্মম উদাহরণ।

Leave a Comment

Footer Section