চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পশ্চাৎভূমি বা হিন্টারল্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি জানান, ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন বাঁশ, বেত প্রভৃতি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি করা যেতে পারে, এমনকি এসব কাঁচামাল বাংলাদেশে এনে প্রক্রিয়াজাত করেও রপ্তানি করা সম্ভব। এতে উভয় দেশই উপকৃত হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর বনানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক করিডর ও অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এ সভার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ। সহায়তা দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং সভাপতিত্ব করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
সভায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে অনুকূল ভূরাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, তবে সেটি যেন অপচয় ও দুর্নীতিমুক্ত হয়। তিনি জানান, বর্তমানে উন্নয়ন বাজেটে থাকা প্রায় ১,২০০টি প্রকল্পের ৯৮ থেকে ৯৯ শতাংশই বিগত সরকারের সময় নেওয়া। এসব প্রকল্পেই বাজেটের বড় অংশ চলে যাচ্ছে, ফলে নতুন প্রকল্প গ্রহণ বা গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প নথিতে প্রায় শেষ দেখানো হলেও, ভুল নকশার কারণে এখন আরও তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলেও ভাঙ্গা থেকে আর কোনো সংযোগ নেই, ফলে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক কার্যকারিতা আসেনি।
প্রধান উপদেষ্টার সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এলডিসি উত্তরণ নিয়েও আরও সুস্পষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, শুধু বড় অবকাঠামো নয়, ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করাও জরুরি। তিনি জানান, দেশের রপ্তানি খাত এখনো পোশাকনির্ভর, অথচ চামড়া শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে দীর্ঘদিনেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন গ্যাস সংকটের বিষয় তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান কারখানাগুলোকেই ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বিনিয়োগ কীভাবে আসবে?
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তাঁরা বলেন, বর্তমানে দেশে আসা বিনিয়োগের বেশির ভাগই পুনর্বিনিয়োগ, নতুন বড় বিনিয়োগ প্রায় আসছেই না।
আলোচকরা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য শুধু অবকাঠামো নয়, ব্যবসার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, দক্ষ জনবল এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এগুলো নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।