চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ও সাম্পানবাইচে আগামী বছর থেকে সরাসরি যুক্ত হবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, এই দুটি উৎসবকে পৃষ্ঠপোষকতা করবে মন্ত্রণালয় এবং এগুলোকে জাতীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ফারুকী বলেন, ‘আপনাদের দুটি উৎসব আমরা চিহ্নিত করেছি—একটি জব্বারের বলীখেলা এবং অন্যটি সাম্পানবাইচ। যেমন সিডনির নাম বললে অপেরা হাউসের কথা মনে পড়ে, তেমনি চট্টগ্রামের নাম বললে জব্বারের বলীখেলার ছবি চোখে ভেসে ওঠে। আবার, নিউইয়র্ক শহর যেমন হলুদ ট্যাক্সি ছাড়া কল্পনা করা যায় না, তেমনি সাম্পান ছাড়া চট্টগ্রাম শহর চিন্তা করা যায় না। তাই আমরা এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, শুধুই উৎসব উদযাপন নয়, সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত ঐতিহ্যগুলোকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এই লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমিকে একটি তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তীতে ‘কালচারাল হেরিটেজ ক্যালেন্ডার’-এ যুক্ত হবে।
চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারুকী বলেন, ‘এখনো নির্মাণাধীন থাকায় এটি নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে সাধারণভাবে বলব, আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোর উন্নয়ন মানে যেন শুধু ভবন নির্মাণ। দালানের ভেতরে কী হবে, তা নিয়ে ভাবনার অভাব রয়েছে।’
শিল্পকলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের শিল্পকলাগুলোতে যে কারিকুলাম চলে আসছে, সেটা যুগোপযোগী নয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক উপাদান হলো গান, কিন্তু আমরা তার যথাযথ মূল্য দিই না। রক মিউজিকে চট্টগ্রামের মিউজিশিয়ানদের অবদান অনেক। তবুও চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিকে তারা নিজেদের কেন্দ্র হিসেবে ভাবতে পারেনি, এটি বড় ব্যর্থতা।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কুমিল্লায় অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে ফারুকী বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো আধুনিক সমাজের চাহিদা পূরণে সক্ষম নয়। এগুলোর পুনর্গঠনের জন্য একটি নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন।’
চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের অকার্যকর অবস্থার কথাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। জানান, এই জাদুঘরের বাজেট দ্বিগুণ করা হয়েছে এবং একটি গবেষণা দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে এর অগ্রগতি দেখা যাবে। এছাড়া কিউরেটর টিম এবং আধুনিকীকরণের দিকেও নজর দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। পরে তার চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি পরিদর্শনেরও কথা রয়েছে।