ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণ আকাঙ্ক্ষা ঘিরে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (পেন্টাগন) গ্রিনল্যান্ডকে ইউরোপীয় কমান্ড (EUCOM) থেকে সরিয়ে মার্কিন উত্তরাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড (NORTHCOM) এর অধীনে নেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আবারও সামনে আসছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুল আলোচিত সেই আকাঙ্ক্ষা—গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আনার।
সিএনএনের বরাতে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে। যদিও ভূগোলগতভাবে গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকার অংশ, তবে এটি ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপের সঙ্গে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে যুক্ত।
ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই পরিবর্তন শুধু সামরিক প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস নয়, বরং এটি ট্রাম্পের বিতর্কিত “গ্রিনল্যান্ড চাই” নীতির অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সদ্য এক এনবিসি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারও বলেন, “আমি কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছি না। আমি বলছি না যে করব, তবে নাকচও করছি না।” তার ভাষায়, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের খুব দরকার। ওখানে মানুষ খুব কম, আমরা তাদের যত্ন নেব। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি।”
গ্রিনল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি রয়েছে—পিটুফিক স্পেস বেস (সাবেক থুলে এয়ার বেস)। এটি রাশিয়া ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঠেকাতে মার্কিন কৌশলগত অবস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দূরত্বের কারণে ইউরোপীয় কমান্ড প্রায়ই গ্রিনল্যান্ডকে অবহেলা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই কারণে একদল সামরিক কর্মকর্তার মতে, NORTHCOM-এর অধীনে আনা হলে এটি আরও গুরুত্ব পাবে।
তবে ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয়ের মধ্যেই এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ডেনিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি গ্রিনল্যান্ডকে ডেনমার্ক থেকে পৃথক করার একটি প্রতীকী ইঙ্গিত হতে পারে। ইউরোপীয় কমান্ড যেখানে ডেনমার্ককে অধীন রাখবে, সেখানে গ্রিনল্যান্ড থাকবে অন্য কমান্ডে—এই বিভাজন কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মার্কিন খনিজ সম্পদ উত্তোলন সংক্রান্ত জনমত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোককে রাসমুসেন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমরা বন্ধুদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করি না।” তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট—গ্রিনল্যান্ডকে ঘিরে উত্তেজনা আবারও বাড়ছে। আর্কটিক অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য নিশ্চিত করার প্রতিযোগিতায় এই ভূখণ্ডটি হয়ে উঠছে কৌশলগত দখলের কেন্দ্রবিন্দু। প্রশাসনিক সীমান্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই দখল কতটা এগোবে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন গোটা বিশ্বেই।