গুরুতর ক্যানসারে নতুন ওষুধের সফল পরীক্ষা, বেঁচে থাকার সময় বেড়েছে দ্বিগুণ

News Desk

গুরুতর ক্যানসারে নতুন ওষুধের সফল পরীক্ষা, বেঁচে থাকার সময় বেড়েছে দ্বিগুণ. Dhakainlight.com

মাথা ও গলার গুরুতর পর্যায়ের ক্যানসারের চিকিৎসায় নতুন এক ইমিউনোথেরাপি ওষুধের সফলতা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে এই ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগীদের শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার সময় দ্বিগুণ বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে রোগীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ক্যানসারমুক্ত থাকতে পারছেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যসহ ২৪টি দেশের ১৯২টি হাসপাতালের সমন্বয়ে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় এই সাফল্য এসেছে। গবেষণার আওতায় ৩৫০ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ওপর ইমিউনোথেরাপি ওষুধ ‘পেম্ব্রোলিজুমাব’ প্রয়োগ করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল এবং অর্থায়ন করেছে এমএসডি নামক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

৪৫ বছর বয়সী লরা মার্সটন ছিলেন এই গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের একজন। ছয় বছর আগে তাঁর জিবে ক্যানসার ধরা পড়ে এবং তখন তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে তাঁকে পেম্ব্রোলিজুমাব দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, পূর্ণকালীন চাকরি করছেন এবং জীবন উপভোগ করছেন।

অধ্যাপক কেভিন হারিংটন, যিনি যুক্তরাজ্যে গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন, জানিয়েছেন যে এই ওষুধ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্যানসার শনাক্ত করতে ও তা প্রতিরোধে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে ওষুধ প্রয়োগের ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম টিউমারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে।

এ গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে, যেসব রোগীদের ওপর নতুন এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে তিন বছর পর শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার হার ছিল ১০ শতাংশ কম। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ওষুধটি ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।

মার্সটনের অস্ত্রোপচারে জিব ও গলার লিম্ফ নোড সরিয়ে নেওয়ার পর তাঁর মুখে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণ করতে তাঁর বাঁ হাত থেকে পেশি নেওয়া হয়। এরপর তিনি আবার কথা বলা ও খাওয়ার অভ্যাস রপ্ত করেন। তাঁর ভাষায়, এই ইমিউনোথেরাপি তাঁর জীবনকে নতুন করে ফিরিয়ে দিয়েছে।

এই নতুন চিকিৎসাপদ্ধতিকে বিজ্ঞানীরা গত দুই দশকে ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। কারণ, মাথা ও গলার ক্যানসার এমন একটি জটিল রোগ, যার চিকিৎসায় এতদিন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অর্ধেকই পাঁচ বছরের মধ্যে মারা যান।

গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধটি অস্ত্রোপচারের আগে শরীরে প্রয়োগ করলে ইমিউন সিস্টেমের জন্য টিউমারকে ভালোভাবে শনাক্ত করা সহজ হয় এবং অস্ত্রোপচারের পর এক বছর পর্যন্ত ওষুধ চালিয়ে গেলে তা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

অধ্যাপক হারিংটন বলেন, এই নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি শরীরের অন্য অংশে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা হ্রাস করে এবং যারা এতে সাড়া দিচ্ছেন, তাঁদের জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাচ্ছে।

গবেষণার ফলাফল আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই চিকিৎসা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাবে এবং ক্যানসার চিকিৎসায় এটি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

Footer Section