ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে চলমান আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, ‘‘গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে আন্দোলন চালাচ্ছে বিএনপি, এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে এবং সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’’
সোমবার (১৯ মে) বিকেলে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। ওই পোস্টে তিনি মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ গ্রহণ না হওয়ার পেছনে ১০টি আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার কথা উল্লেখ করেন।
পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘‘যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বরং গায়ের জোরে আদায় করার উদ্দেশ্যেই নগর ভবন বন্ধ করে মহানগর বিএনপি আন্দোলন চালাচ্ছে। আদালতের রায়, গেজেট প্রকাশ, এবং উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে উপেক্ষা করে একতরফা শপথ আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
তিনি জানান, এই আন্দোলনের কারণে নগর ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, ফলে নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এই আন্দোলন ‘সাধারণ জনগণের নয়’, বরং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এটি বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বিত কর্মসূচি।
পোস্টে উল্লিখিত ১০টি পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলো—
১. হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আরজি সংশোধন অবৈধ হলেও নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনাল তা উপেক্ষা করে রায় দিয়েছে।
২. নির্বাচন কমিশন শুনানিতে অংশ নেয়নি, ফলে একতরফা রায় হয়েছে এবং কমিশন আপিল করেনি।
৩. আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত আসার আগেই রাত ১০টায় গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
৪. মামলায় স্থানীয় সরকার বিভাগ পক্ষভুক্ত ছিল না এবং তাদের প্রতি কোনো নির্দেশনাও নেই।
৫. শপথ না দেওয়ার কারণে নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিবাদী করে রিট করেছে, যা বিচারাধীন।
৬. বরিশাল সিটি করপোরেশনের অনুরূপ মামলায় হাইকোর্টের রায় আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল মামলা খারিজ করেছে, যা দ্বিমুখী অবস্থান তৈরি করছে।
৭. মেয়াদ নিয়ে জটিলতা রয়েছে; কতদিন মেয়র থাকবেন, তা স্পষ্ট নয়।
৮. নির্বাচন কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘কোনো আইনি জটিলতা না থাকলে ব্যবস্থা নিতে।’’ বাস্তবে একাধিক আইনি জটিলতা রয়েছে।
৯. এই জটিলতা নিরসনে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে।
১০. আওয়ামী আমলের অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নও সামনে এসেছে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘‘উল্লেখিত সব জটিলতা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়। তবে এগুলো সমাধান হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে শপথে কোনো বাধা থাকবে না।’’
নিজের বিরুদ্ধে ইশরাক হোসেনের ‘আক্রমণাত্মক ও অপমানজনক’ বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘‘এর কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এটি একান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আবার কেউ যেন না বলেন—এটি সাধারণ জনগণ করছে। বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নির্দেশনায় এবং গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরাই।’’
নগর ভবনের সামনের আন্দোলন ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে হলেও উভয়পক্ষের বক্তব্যেই বোঝা যাচ্ছে, এই ইস্যুতে আইনি ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
4o