গাজীপুরের শ্রীপুরে জিন্নাত নিটওয়্যার লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার ছাদ থেকে পড়ে জাকির হোসেন (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানা ঘেরাও করে ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নিহত জাকির হোসেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মুক্তার উদ্দিনের ছেলে। তিনি শ্রীপুরের নয়নপুর নতুন বাজার এলাকায় থেকে জিন্নাত নিটওয়্যারে কাজ করতেন। সোমবার সন্ধ্যায় আটতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
জাকিরের মৃত্যুতে আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কারখানার সামনে জড়ো হন সহকর্মীরা। শ্রমিকদের অভিযোগ, ছুটি চাইতে গিয়ে জাকির কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের শিকার হন এবং অপমানিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এক শ্রমিক আল আমিন বলেন, “জাকির হোসেন ছুটি চেয়েছিলেন, কিন্তু কর্মকর্তারা তাকে অপমান করেন। তাতে সে হতাশ হয়ে পড়ে।” তবে তিনি ঠিক কোন কর্মকর্তার সঙ্গে জাকিরের কথা হয়েছিল তা জানাতে পারেননি।
ঘটনার জেরে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং কারখানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। তারা পুলিশের একটি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) গাড়িতে হামলা চালান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরাও现场ে উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক বলেন, “শ্রমিকেরা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং হামলা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
অন্যদিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যার পেছনে পারিবারিক কারণে হতাশাকে দায়ী করছে। জিন্নাত নিটওয়্যারের এজিএম জুবায়ের এম বাশার বলেন, “জাকির ছুটি চেয়েছিলেন—এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। বরং আমরা জানতে পেরেছি, পারিবারিক সমস্যার কারণে সে হতাশাগ্রস্ত ছিল। ছাদে হাঁটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যায়।”
তবে শ্রমিকদের ভাষ্য একেবারেই ভিন্ন। তাদের দাবি, কর্মপরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে বহুদিন ধরেই সমস্যা চলছিল, যার ফলেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। জাকিরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই ঘটনাটি গাজীপুরের শিল্প এলাকায় শ্রমিক-প্রশাসন সম্পর্কের বর্তমান বাস্তবতা ও উত্তেজনার একটি বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে এবং কেউ দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।