গাজায় এখনো বন্দি ৫৮ জনকে মুক্ত করতে সাবেক জিম্মিদের আবেগঘন আহ্বান

News Desk

গাজায় এখনো বন্দি ৫৮ জনকে মুক্ত করতে সাবেক জিম্মিদের আবেগঘন আহ্বান. Dhakainlight.com

গাজা থেকে মুক্তি পাওয়ার চার মাস পরেও কিথ সিগেল এখনো ভুলতে পারছেন না তার ৪৮৪ দিনের ভয়াবহ বন্দিজীবন। তার মনজুড়ে কেবল একটি চিন্তা—যারা এখনো সেখানে বন্দি, তারা কেমন আছেন? প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই তাদের কথা মনে পড়ে, এবং তার চোখে সেই সব দৃশ্য ভেসে ওঠে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সন্ত্রাসী হামলার সময় ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। এখনো ৫৮ জন বন্দি রয়েছেন—কেউ হয়তো জীবিত, কেউ হয়তো মৃত। এদের মুক্তির জন্য আবারও জোরালো আন্দোলন শুরু হয়েছে। তেল আবিবের রাস্তায় প্রতিবাদ, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন, এবং ‘হোস্টেজ স্কয়ার’-এ অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাবেক জিম্মি ও তাদের স্বজনরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন—চুক্তি করুন, যেভাবেই হোক সকল বন্দিকে ফিরিয়ে আনুন।

২২ বছর বয়সী ওমের শেম টোভ, যিনি যুদ্ধবিরতির আগেই মুক্তি পান, জানান, প্রতিদিন খাওয়ার সময় বা গোসল করার সময় তার মনে পড়ে—যারা গাজায় আছেন, তারা এই স্বাভাবিক কাজগুলোও করতে পারছেন না। গলার কাছে চেপে থাকা এক যন্ত্রণার অনুভূতি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি বলেন, “ওরা আমার ভাই-বোন। আমি আমার পরিবারকে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়ব।”

বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়া এই মানুষগুলো এখন সবচেয়ে শক্তিশালী কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন বন্দিদের মুক্তির আন্দোলনে। তারা মনে করেন, জীবনের ঝুঁকিতে থাকা ওই বন্দিদের বাঁচানো এখন হামাসকে ধ্বংস করার চেয়েও জরুরি।

সিগেল স্মরণ করেন, কীভাবে তিনি ও অপর দুই বন্দি—২২ বছর বয়সী ইসরায়েলি সৈনিক মাতান অ্যাঙ্গ্রেস্ট এবং ৪৮ বছর বয়সী ওমরি মিরান—একসাথে ছিলেন, কথা বলতেন, গান শুনতেন, পরিবারের কথা ভাবতেন। মিরান তার দুই কন্যা—আলমা ও রনি’র কথা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়তেন। সম্প্রতি হামাস প্রকাশিত এক ভিডিওতে মিরানকে দেখে সিগেল বলেন, “সে একেবারে অন্য মানুষ হয়ে গেছে—দুঃখজনকভাবে।”

সিগেল জানান, তারা প্রায়ই প্রার্থনা করতেন যেন আইডিএফ এসে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু সেই আশাও ভেঙে পড়ে যখন তারা জানতে পারেন যে, হামাস আগস্ট মাসে ৬ জন জিম্মিকে হত্যা করেছে। তখন থেকেই তাদের মধ্যে আরও ভয় ঢুকে যায়—যদি উদ্ধার চেষ্টার সময় বন্দিরাই মারা যান?

সিগেল বলেন, “যুদ্ধ চলতে থাকলে বন্দিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বন্দিদের ফেরানোর জন্য একটা সমঝোতা দরকার—এটাই একমাত্র পথ।”

শেম টোভও একই আশঙ্কা করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেই মুহূর্তগুলো, যখন আইডিএফ-এর বোমা তাদের আশেপাশে পড়ত। “আমি নিজের দেশের মানুষদের হাতে মরার ভয়ে ছিলাম,” বলেন তিনি।

তারা দুজনই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সিগেল বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আমি ঘরে ফিরেছি ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্যই। তিনি বলেছেন, এটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাকে অনুরোধ করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি চুক্তি করুন এবং সবাইকে ফিরিয়ে আনুন।”

শেম টোভ জানান, ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রতি হামাসের আচরণ বদলে যায়—তাকে আর গালি দেওয়া হয়নি, খাবারও কিছুটা বেড়েছিল। তিনি বলেন, “তারা বুঝেছিল ট্রাম্প চাইছেন বন্দিদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে। এটা তাদের আচরণে পরিবর্তন এনেছে।”

এই সব অভিজ্ঞতা ও আবেগের মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা উঠে আসে—গাজায় যারা এখনো বন্দি, তাদের জীবন প্রতিদিন হুমকির মধ্যে রয়েছে। যুদ্ধ নয়, এখন প্রয়োজন কূটনৈতিক সমঝোতা এবং মানবিকতা। কারণ, প্রত্যেক বন্দি শুধু একজন নাম নয়—তারা কারও বাবা, মা, সন্তান, অথবা প্রিয়জন। এবং তাদের ফেরানোর দায়িত্ব সবার।

Footer Section