প্রায় এক দশক পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো পঞ্চম সমাবর্তন। বুধবার সকাল থেকেই পুরো ক্যাম্পাসে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা গায়ে গাউন, মাথায় টুপি পরে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। কারও সঙ্গে ছিল সন্তান, কেউ আবার এসেছেন মা-বাবাকে নিয়ে। শহীদ মিনার, রেলস্টেশন, দক্ষিণ ক্যাম্পাস, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কলা অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান ঝুপড়ি—সব জায়গাতেই ছিল প্রাণচাঞ্চল্য।
এবারের সমাবর্তনে ২২ হাজার ৫৮৬ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সোমবার থেকেই গাউন বিতরণ শুরু হয়। গাউন হাতে পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ছবি তোলা, ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি আর পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন।
রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রায় সাত বছর পর ক্যাম্পাসে এসেছি। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে। এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’
সমাবর্তনের বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। ১৯৭২ সালে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। নোবেলজয়ের পর ২০০৬ সালে এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি। প্রায় ১০ বছর পর এবার সমাবর্তনে অংশ নিতে আবার এলেন নিজের সাবেক কর্মস্থলে।
সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান হয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সেখানে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ইউনূস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সরকারের চার উপদেষ্টা—শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন বেলা দেড়টায়। এর আগে হয় সমাবর্তন শোভাযাত্রা, যদিও এতে গ্র্যাজুয়েটদের অংশগ্রহণ ছিল না। বিকেল দুইটায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। বক্তব্যপর্ব শেষে বিকেল চারটায় অনুষ্ঠান শেষ হয়।
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর মাত্র ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তখন বিভাগ ছিল মাত্র ৪টি, শিক্ষক ৭ জন। বর্তমানে ১০টি অনুষদের অধীনে ৪৮টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট এবং ৫টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫, শিক্ষক ৯৯৬ জন, কর্মকর্তা ৪৪৫ জন এবং কর্মচারী ১ হাজার ৫২৮ জন। রয়েছে ১৪টি আবাসিক হল ও একটি হোস্টেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ পর্যন্ত পাঁচবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি, যেখানে অংশ নেন ৭ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী। এর আগে তৃতীয় সমাবর্তন হয় ২০০৮ সালে, দ্বিতীয় ১৯৯৯ সালে এবং প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজন শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়, প্রাক্তনদের জন্য এক অবিস্মরণীয় পুনর্মিলনও বটে। স্মৃতি, উচ্ছ্বাস আর গর্বে মুখর এক দিন পার করলেন হাজারো প্রাক্তন শিক্ষার্থী।