ঘটনাপ্রবাহ
রবিবার (১১ মে ২০২৫) দিবাগত রাতের দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার খিলক্ষেত বাজারে অভিযান চালিয়ে উত্তরা আর্মি ক্যাম্পের ৬ নম্বর এডি ব্রিগেডের সেনাসদস্যরা মো. শহিদুল ইসলাম ‘খোকন’ ও তার দুই সহযোগী মো. হেলাল উদ্দিন ও মো. আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করে। সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, এই অভিযানে গোপন ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। (অন্যান্য কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে অন্য সংবাদমাধ্যমগুলোও একই তথ্য প্রতিধ্বনিত করেছে।)
সেনাবাহিনীর বক্তব্য ও অভিযোগ
উত্তরা আর্মি ক্যাম্প থেকে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মো. শহিদুল ইসলাম খোকনকে খিলক্ষেত বাজার এলাকার “শীর্ষ সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং লিডার, ডাকাত” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং স্থানীয় দোকানপাট থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে তার বিরুদ্ধে মোট আটটি মামলা রয়েছে। সেনাবাহিনী জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২২ এপ্রিল এই একই অভিযানে তারা উত্তরা ক্যাম্পের অধীনে গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে অপরাধের জালে ফেরে।
আর্মি ক্যাম্পের সেনা কর্মকর্তারা আবারও জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অপরাধ স্বীকার করেছে। এরপর তাদেরকে পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের জন্য খিলক্ষেত থানার পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযান সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট
আইএসপিআর সূত্রে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধ দমনে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর আওতায় মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, ঢাকা কলেজ, খিলক্ষেত, উত্তরা, আডাবর সহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব ও স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় ৫১ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। এ অভিযানে পুলিশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলছে, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক অতীতে খিলক্ষেত বাজারে একই ধরনের অভিযানের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে একই উত্তরা আর্মি ক্যাম্প খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় দোকানদারদের নিয়মিত চাঁদাবাজ মো. আব্দুর রহিম ও মনির হোসেন লিটনকে গ্রেফতার করেছিল। ওই সংবাদেও সেনাবাহিনী বলেছিল, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে অভিযান চালানো হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজধানীসহ বৃহত্তর ঢাকায় অপরাধ দমনের জন্য এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে সেনাবাহিনী দাবি করেছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
উপরোক্ত সেনাবাহিনীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি ব্যতীত ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ সদর দপ্তরে বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। স্থানীয়দের মধ্যে ভিড় দেখা গেলেও খোকনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি সংক্রান্ত কোনো মামলা খিলক্ষেত থানায় নেই বলে জানা গেছে, তাই অভিযানের প্রকৃত কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী ওই বাজার এবং আশপাশের এলাকাবাসী সাধারণত চাঁদাবাজি মুক্ত বলে দাবি করে, তাই খোকনকে নিয়ে এ প্রেক্ষাপটে সন্দেহ-উদ্রেক হয়েছে। তবে এখনও এই ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও প্রমাণ পেশ করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত বা মুক্তি দেওয়ার পর্যায়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্রঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন।