কোরবানির পশু কেনার আগে যে ৫টি মৌলিক বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি – কোরআন ও হাদীসের আলোকে

ব্লগ


পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলমানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের উপলক্ষ। এ দিনে যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কোরবানি দেওয়া ফরজ ইবাদত। কোরবানির পশু কেনার সময় ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু মৌলিক বিষয় খেয়াল রাখা আবশ্যক, যাতে কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হয় এবং সুন্নাহ মোতাবেক হয়। নিচে কোরআন ও হাদীসের আলোকে এমন ৫টি বিষয় তুলে ধরা হলো যা পশু ক্রয়ের সময় মেনে চলা জরুরি।


১. নিয়ত ও তাকওয়া (আল্লাহর ভয় ও আন্তরিকতা)

কোরআন:

“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর মাংস ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
📖 সূরা হজ্জ: ৩৭

পশু কেনার সময় আমাদের উদ্দেশ্য যেন হয় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। লোক দেখানো বা বড় পশু কেনার অহংকার যেন এতে না থাকে। নিয়ত শুদ্ধ না হলে ইবাদত কবুল হয় না।


২. পশুর স্বাস্থ্য ও দোষমুক্ত হওয়া

হাদীস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,

“চার ধরণের পশু কোরবানির জন্য যথোপযুক্ত নয়: (১) এক চোখে স্পষ্ট ত্রুটি আছে, (২) অসুস্থ যার অসুস্থতা স্পষ্ট, (৩) ল্যাংড়া যার খোঁড়ামি স্পষ্ট, (৪) এমন দুর্বল যে হাড়ে মজ্জা নেই।”
📚 আবু দাউদ: ২৮০২

অতএব, পশু যেন শারীরিকভাবে সুস্থ, সবল ও দৃষ্টিগোচর কোনো ত্রুটি থেকে মুক্ত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।


৩. বয়সের সীমা মেনে চলা

হাদীস:
রাসূল (সা.) বলেন,

“যে ব্যক্তি কোরবানি দিতে চায়, সে যেন মুসিন (পূর্ণ বয়স প্রাপ্ত) পশু কোরবানি দেয়। যদি তা সম্ভব না হয় তবে জাযা (ছোট বয়সী কিন্তু পরিপূর্ণ আকৃতি সম্পন্ন) ছাগল দিতে পারে।”
📚 সহীহ মুসলিম: ১৯৬৩

✅ গরু ও মহিষ: অন্তত ২ বছর পূর্ণ
✅ ছাগল ও ভেড়া: অন্তত ১ বছর পূর্ণ (বা ৬ মাস পূর্ণ, যদি দেখতে এক বছরের মতো হয়)


৪. পশুর মালিকানা নিশ্চিত হওয়া

কোরবানির পশু হালাল উপার্জনের টাকায় ক্রয় করা এবং ক্রেতার মালিকানাধীন হওয়া আবশ্যক। চুরি করা, জোরপূর্বক নেওয়া বা সন্দেহজনক উৎস থেকে কেনা পশু দ্বারা কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়।

হাদীস:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র; তিনি শুধু পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।”
📚 সহীহ মুসলিম: ১০১৫


৫. শারীরিক সক্ষমতা ও প্রাপ্যতা বুঝে পশু নির্বাচন

ইসলামে কোরবানি সামর্থ্য অনুযায়ী করা উচিত। বেশি বড় পশু নয়, বরং হালাল উপার্জনে সুন্দর সুস্থ পশু কোরবানি করাই উত্তম। প্রয়োজন হলে অংশীদারি ভিত্তিতেও (যেমন: গরুতে ৭ জন পর্যন্ত) কোরবানি করা যায়।

কোরআন:

“সৎ কাজের ক্ষেত্রে পরস্পরকে সাহায্য করো।”
📖 সূরা মায়েদাহ: ২

অর্থাৎ, যৌথভাবে কোরবানি করলেও নিয়ত শুদ্ধ ও সুন্নাহ মোতাবেক হলে তা গ্রহণযোগ্য।


উপসংহার:
কোরবানির পশু কেনার সময় শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং শরীয়তের নির্দেশনা অনুসরণ করাই মুখ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এই পাঁচটি মৌলিক বিষয় মাথায় রেখে পশু ক্রয় করলে কোরবানির ইবাদত পরিপূর্ণ হয়। আল্লাহ আমাদের সকলের কোরবানি কবুল করুন এবং হালাল ও সহীহভাবে ইবাদত করার তাওফিক দিন।
আমিন।

Footer Section