কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার একটি গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে এক নবম শ্রেণিপড়ুয়া কিশোরীকে গভীর রাতে তুলে নিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পরিবার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ চালিয়ে আসছিল।
নিহত কিশোরীর পরিবার জানায়, গত শুক্রবার রাতে কিশোরী নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিল। গভীর রাতে কয়েকজন লোক তার বাড়িতে ঢুকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে, বাড়ির পাশের কৃষিজমিতে কিশোরীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেননি, তবে পরে তারা নিশ্চিত হন যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
কিশোরীর চাচা জানান, “আমাদের জমি নিয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ চলছে। সেই বিরোধের জেরে আমাদের পরিবারের সদস্যকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা মামলায় সমস্ত বিষয় উল্লেখ করব এবং আশা করি আইন অনুযায়ী সুবিচার পাবো।” তিনি আরও জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারের সদস্যরা প্রচন্ড দুঃখিত এবং বিচারের জন্য তাদের লড়াই চালিয়ে যাবেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহত কিশোরীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং তদন্তের পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন, “এখন পর্যন্ত কোন আসামি আটক হয়নি, তবে ঘটনার তদন্ত চলছে। মামলার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন যে, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধের কারণে তারা বারবার স্থানীয়ভাবে সামাজিক মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটল। কিশোরীর মৃত্যু পরিবারের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি এবং তারা আশা করছেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে, এই ধরনের ঘটনা তাদের এলাকায় একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। গ্রামের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনার দ্রুত সমাধানের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগ ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে এবং আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এতে করে এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে প্রশাসন বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে জমি নিয়ে বিরোধের কারণে গ্রামের মধ্যে একটি উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে সচেষ্ট রয়েছে। তারা এই ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সে জন্য আরো সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় জনগণকে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতে বলেছেন।
তবে, এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই, তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং আসামির শনাক্তকরণের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে, নিহত কিশোরীর পরিবার মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তারা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছে।