‘কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে গেল’—র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহত্যা, পরিবারে শোকের মাতম

News Desk

‘কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে গেল’—র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার আত্মহত্যা, পরিবারে শোকের মাতম. Dhakainlight.com

চট্টগ্রামের র‍্যাব ক্যাম্প থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার পলাশ সাহার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার তাড়াশি গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের বাতাস।

মা আরতী সাহা কান্না জড়িত কণ্ঠে বারবার বলছিলেন, ‘তোরা আমাকে আমার বাবার কাছে নিয়ে যা। আমি বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখি। কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’ এ সময় তিনি ছেলের কপালে চুমু খেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর আহাজারি শুনে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে র‍্যাব-৭ ক্যাম্পে নিজের কক্ষ থেকে পলাশ সাহার মাথায় গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পাশে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। র‍্যাবের প্রাথমিক ধারণা, এটি আত্মহত্যা। চিরকুটে পলাশ নিজের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী না করে লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না…’

৩৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন পলাশ সাহা। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন, এবং সর্বশেষ র‍্যাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কর্মক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলেও ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তি ভুগিয়ে আসছিল তাঁকে।

পলাশের বড় ভাই নন্দলাল সাহা জানান, বিয়ের দুই মাস পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। পলাশ মা ও স্ত্রীকে একসঙ্গে রেখে সংসার করতে চাইলেও, স্ত্রী সেটি মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে পারিবারিক টানাপোড়েন লেগেই থাকত। নন্দলাল বলেন, ‘পলাশ চেয়েছিল মা ও স্ত্রী একসঙ্গে থাকুক। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এখন সব শেষ হয়ে গেল। আমাদের ভাইটাকে হারালাম।’

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে পলাশ সাহার মরদেহ কোটালীপাড়া পৌরসভার পাড়কোনা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার ও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর দুপুরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

পলাশের মৃত্যুর খবরে প্রতিবেশী, সহপাঠী ও বন্ধুরা ছুটে আসেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে। বাল্যবন্ধু আরিফ হোসেন বলেন, ‘পলাশ ছিল অত্যন্ত মেধাবী ও বন্ধুবৎসল। তার এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। এটা আমাদের জন্য বিরাট শোক।’

এই অকালমৃত্যু শুধু সাহা পরিবার নয়, গোটা গ্রামকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের চোখে এখন শুধুই প্রশ্ন—এমন মেধাবী, মানবিক একজন মানুষ কীভাবে জীবনের কাছে এমনভাবে হার মানলেন?

Leave a Comment

Footer Section