কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে ভারতের কূটনীতি কঠিন পরীক্ষার মুখে

News Desk

কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাবে ভারতের কূটনীতি কঠিন পরীক্ষার মুখে. Dhakainlight.com

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে উত্তেজনা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে দুই দেশ পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ও হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি খানিকটা শান্ত হলেও ভারতের জন্য তা এক কঠিন কূটনৈতিক পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ভারতের প্রভাব ও আত্মবিশ্বাস বাড়লেও কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ বরাবরই দেশটির জন্য সংবেদনশীল একটি বিষয়। এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের সেই দীর্ঘদিনের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মন্তব্য করেছেন, যুদ্ধবিরতির আওতায় যে বিস্তৃত আলোচনা প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে ভারত আগ্রহী নয়। এই যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখা হবে ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বিষয়টি সরাসরি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

সম্প্রতি সংঘর্ষে দুই দেশের অন্তত ৬৬ জন প্রাণ হারান। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বিমান হামলার মাধ্যমে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ভারত কাশ্মীরকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সে অনুযায়ী, তারা এই সমঝোতাকে দুই দেশের পারস্পরিক আলোচনার ফল বলেই উপস্থাপন করেছে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস সরব হয়ে উঠেছে। দলটির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তোলেন, “আমরা কি তাহলে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার দরজা খুলে দিলাম?”

এদিকে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারসাম্য রক্ষা ভারতের জন্য একটি সূক্ষ্ম কৌশলগত হিসাব। একদিকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনমত, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক—এই দুই দিক সামাল দিতে হবে ভারতকে।

পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানালেও ভারত ট্রাম্পের কোনো ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়নি। বরং হঠাৎ করে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজ দেশে বিরল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সাবেক বিজেপি সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, “ভারতে এই যুদ্ধবিরতি ভালোভাবে নেওয়া হয়নি। কারণ, হঠাৎ করে ট্রাম্প যেন নিজেই রায় দিয়ে দিয়েছেন।”

কাশ্মীর ইস্যুতে এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ ও সংঘাত ঘটেছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান-সমর্থিত বিদ্রোহীরা কাশ্মীরে সহিংসতা ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

বিশ্লেষক ব্রহ্ম চেলানি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ভারত মাত্র তিন দিনের মধ্যে সামরিক অভিযান থামিয়ে কাশ্মীর সংকটের মূল কারণ সীমান্তপার সন্ত্রাসবাদের বদলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে কাশ্মীর বিতর্ককে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার আরেকটি বড় কারণ সিন্ধু পানি চুক্তি। ভারত গত মাসে এই চুক্তি স্থগিত করে, যা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় সংকট তৈরি করতে পারে। কারণ দেশটির কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এ পানির উৎস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাকিস্তানের পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিস্তৃত সংলাপের নিশ্চয়তা না পেলে পাকিস্তান কখনোই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতো না। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মইদ ইউসুফ বলেন, “কাশ্মীর নিয়ে বারবার যুদ্ধের কিনারায় ফিরে যাওয়ার এই চক্র ভাঙতে হলে গভীর রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “কারণ, মূল সমস্যাগুলো এখনও রয়ে গেছে। ফলে কয়েক মাস বা কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারও এমন সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”

সব মিলিয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা ভারতের ঐতিহ্যগত কূটনৈতিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। সামনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম সমন্বয়ের ওপর।

4o

Leave a Comment

Footer Section