কান চলচ্চিত্র উৎসবের রাজনীতিকভাবে উত্তপ্ত পরিবেশে নতুন আলোড়ন তুলেছে অ্যারি অ্যাস্টারের নতুন ছবি ‘Eddington’। জোয়াকিন ফিনিক্স, পেদ্রো পাসকাল, এমা স্টোন ও অস্টিন বাটলার অভিনীত এই চলচ্চিত্রটি কোভিড মহামারির প্রারম্ভিক সময়ের পটভূমিতে নির্মিত এবং আমেরিকার সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজনের বাস্তবচিত্রকে তুলে ধরে।
ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে নিউ মেক্সিকোর একটি ছোট শহরে। ফিনিক্স অভিনীত একজন শেরিফ মুখোমুখি হন মাস্ক পরার নিয়মকানুন ও জনমানসে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের। অন্যদিকে পাসকাল একজন মেয়রের চরিত্রে, যিনি প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে অস্পষ্ট চুক্তি করে শহরের প্রান্তে ডেটা সেন্টার নির্মাণে যুক্ত হন। এই দ্বন্দ্ব আরও জটিল হয় যখন সামনে আসে শেরিফের স্ত্রী—এক বিষণ্ন, নিজেকে গুটিয়ে রাখা চরিত্র, যাকে রূপ দিয়েছেন এমা স্টোন।
‘Eddington’ ছবিটি বাস্তব সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুকে ঘিরে এক ধরণের পরীক্ষামূলক ব্যাখ্যাকে সামনে আনে—জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন, পরিচয় রাজনীতি, সোশ্যাল মিডিয়া বিভাজন, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব—সব মিলিয়ে এটি এক জটিল ও বহুমাত্রিক সময়ের প্রতিচ্ছবি। পরিচালক অ্যাস্টার নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরতে চাননি। বরং চেয়েছেন বর্তমান সমাজের বাস্তব দ্বন্দ্বকে তুলে ধরতে।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে অ্যাস্টার বলেন, “আমি এই ছবি লিখেছি ভয় এবং উদ্বেগের মাঝে থেকে। আমরা এমন এক যুগে পৌঁছেছি যেখানে মানুষ আর বাস্তবতা নিয়ে একমত নয়।” তাঁর মতে, অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে সমাজ, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি—সম্মত এক বাস্তবতা—হারিয়ে গেছে।
অভিনেতা পেদ্রো পাসকাল নিজের বক্তব্যে বলেন, “ভয়ই তাদের অস্ত্র। সুতরাং আমাদের উচিত ভয়কে জয় করা, নিজেদের প্রকাশ করে যাওয়া এবং সত্যের পক্ষে লড়ে যাওয়া। গল্প বলাটাই এখন সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম।”
পাসকাল আরও বলেন, “আমার পরিবার চিলি থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী। আমি নিজেও শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে উঠেছি। আমি জানি আশ্রয়ের গুরুত্ব কতটা, এবং সেই অভিজ্ঞতাই আমাকে আজকের অবস্থানে এনেছে।”
যখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন তোলেন, “আমেরিকার সামনে কি শুধু গৃহযুদ্ধই অপেক্ষা করছে?” তখন অ্যাস্টার প্রথমে রসিকতা করে বলেন, “আমি ইংরেজি জানি না।” এরপর সিরিয়াস ভঙ্গিতে উত্তর দেন, “আমরা এক ভয়াবহ পথের দিকে এগিয়ে চলেছি। এটা যেন এক ভুল পথে চালানো সমাজিক পরীক্ষা, যেটা থামানো দরকার। কিন্তু কেউই থামাতে আগ্রহী নয়।”
চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম থেকেই রাজনীতি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। উৎসবের উদ্বোধনী রাতে রবার্ট ডি নিরো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “আমার দেশে এখন আমরা গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য লড়ছি, যেটাকে আমরা একসময় স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম।”
অতীতে যেমন ১৯৬৮ সালের কানে ফরাসি পরিচালক জঁ-লুক গদারের নেতৃত্বে উৎসব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনই এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবও রাজনৈতিক আবহে দারুণ রঙ ছড়াচ্ছে। ‘Eddington’ যেন তারই নতুন প্রতিফলন—এক সাহসী, বিতর্কিত এবং সময়োপযোগী চিত্রনাট্যের মাধ্যমে।
এইচবিও’র ব্যানারে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘Eddington’ ছবিটি ২০২৫ সালের ১৮ জুলাই মুক্তি পাবে বিশ্বব্যাপী। এখন থেকেই ছবিটি নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা এবং মতভেদ তুঙ্গে—তবে অ্যাস্টারের ভাষায়, ছবিটির লক্ষ্যই হচ্ছে প্রশ্ন জাগানো, উত্তর দেওয়া নয়।