জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে। সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। এ বৈঠকে অনেক বিষয়ে একমত হলেও কিছু বিষয়ে পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছে জামায়াত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম দিনের আলোচনায় যেমন কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তেমনি কিছু বিষয়ে ভিন্নমতও রয়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সেসব ভিন্নমতের বিষয় পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা জামায়াতের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। সবকিছু একদিনে মীমাংসা হবে না, তবে আলোচনা চলবে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সনদের দিকে এগিয়ে যেতে।”
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “পূর্ববর্তী বৈঠকে কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম। কিছু বিষয় তখন পেন্ডিং ছিল, যেগুলো নিয়ে আমরা দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সেই আলোচনার ভিত্তিতে আমরা অনেক জায়গায় আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করে ঐকমত্য পোষণ করছি।”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলোর দিকেই এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। দেশের মানুষ একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে।
আজকের বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। প্যানেল সদস্য হিসেবে ছিলেন মহিউদ্দিন সরকার।
ঐকমত্য কমিশন গত বছরের অক্টোবরে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মোট ১৬৬টি সুপারিশ রয়েছে। এসব সুপারিশের ভিত্তিতেই দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা হয়েছিল, যেখানে তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাবে একমত হয়। তবে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ উভয় ক্ষেত্রেই তারা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তারা জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এই প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জানায় দলটি।
আজকের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে হলেও ঐকমত্যের একটি ভিত্তি তৈরি হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ সুগম হতে পারে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।