চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. শাহেদ (১৬)। চার দিন আগেই শেষ হয়েছিল তার এসএসসি পরীক্ষা। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে এই কিশোর চাকরির সন্ধানে বের হয়েছিল। তবে নিজের জীবনের ইতি টানতে হবে, তা কল্পনাও করেনি কেউ।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ছড়ারকুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঢাকামুখী লেনে একটি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় শাহেদ। সে মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের মো. আবুল কালামের ছেলে এবং সরকারহাট এনআর উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
শাহেদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা তার আরও তিন বন্ধু আহত হয়েছে। সবাই একই এলাকার বাসিন্দা ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে চাকরি দিতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ কিছু কাগজপত্র চেয়েছিলেন। সেই কাগজপত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে বড়তাকিয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিল শাহেদ। পথে ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
আজ বুধবার সকালে শাহেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকস্তব্ধ পরিবেশ। টিনের চালা ও বাঁশের বেড়ার ঘরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা স্বপ্না বেগম, দাদি মনোয়ারা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা।
শাহেদের মা স্বপ্না বেগম বলেন, “আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। সংসারে অভাব দেখে এসএসসি পরীক্ষার পর একটু সময় পেয়েই সে চাকরি করতে চেয়েছিল। গতকাল কাগজপত্র নিয়ে একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সেই যে গেল, আর ফিরল না। ট্রাক ওর মাথা থেঁতলে দিয়েছে। আমার সোনার টুকরা ছেলেটা আর ফিরবে না।”
তিনি জানান, স্বামী গাছের ব্যবসা করেন। সংসারে স্বামী, ছেলে, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সামিয়া, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার চলে। পাহাড়ঘেরা দুর্গম এলাকায় মূল বাড়ি হলেও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য স্থানীয় নিজামপুর বাজারে ভাড়া বাসায় থাকেন তারা।
শাহেদের বন্ধু ও সহপাঠী আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া জানায়, শাহেদ ভালো ছাত্র ছিল। এক ব্যক্তি মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাকরি দিতে চান বলে জানিয়েছিলেন। সেই কাগজপত্র দিতে গিয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয় সে।
শাহেদের অকাল মৃত্যুতে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সহপাঠী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় শাহেদকে। অল্প বয়সে পরিবারের কাঁধে দায়িত্ব নিতে চাওয়া এক সংগ্রামী কিশোরের স্বপ্নপূরণের আগেই থেমে গেল জীবন।