এফডিএ শুধুমাত্র প্রবীণ ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কোভিড-১৯ টিকা সীমাবদ্ধ করতে পারে

News Desk

Updated on:

এফডিএ শুধুমাত্র প্রবীণ ও উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য কোভিড-১৯ টিকা সীমাবদ্ধ করতে পারে. Dhakainlight.com

যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুমোদনের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন আনছে। নতুন এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভবিষ্যতের আপডেটেড কোভিড টিকাগুলো কেবল ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ও গুরুতর সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ হতে পারে।

FDA-এর বায়োলজিকস ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের পরিচালক ড. বিনয় প্রসাদ ও কমিশনার ড. মার্টি মাকারি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, এই গ্রীষ্মে যেসব টিকা অনুমোদিত হবে, তা কেবল প্রবীণদের ও যাদের পূর্বে থেকেই রোগ আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য হবে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ছয় মাস বয়স থেকে শুরু করে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষেরই অন্তত একটি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে।

এই পরিবর্তনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোভিড টিকা নীতিমালা যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে সঙ্গতি আনবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে বহু সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু আপডেটেড টিকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। প্রসাদ ও মাকারি বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের নিয়মিত কোভিড টিকা গ্রহণে উল্লেখযোগ্য উপকার হয়।

FDA বলছে, ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত তথ্য দরকার। কারণ বিশ্বজুড়ে এই বয়সীদের জন্য টিকা গ্রহণ নিয়ে একমত নয় বিভিন্ন দেশ। কেউ কেউ ৪০ বছর বয়স থেকেই টিকা দেওয়ার সুপারিশ করে, আবার কেউ কেউ ৬৫ বছর থেকে শুরু করে।

প্রসাদ বলেন, “৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে আরও তথ্য দরকার।”

অন্যদিকে, এমোরি ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. জোডি গেস্ট বলেন, “এই নীতিগত পরিবর্তন নতুন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট উদ্ভবের ঝুঁকি বাড়াবে এবং স্বাস্থ্য বৈষম্য আরও প্রকট করবে।”

এছাড়া টিকা ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা, যেমন লং কোভিড ও হৃদরোগ-স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করার দিকটি নতুন পরিকল্পনায় উপেক্ষিত বলেও জানান টেক্সাস চিলড্রেনস হসপিটালের টিকা উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক ড. পিটার হোটেজ।

FDA জানিয়েছে, ৬৫ বছরের বেশি এবং উচ্চঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য আপডেটেড ভ্যাকসিন দ্রুত অনুমোদনের জন্য ইমিউনোব্রিজিং পদ্ধতিতে কাজ করা হবে। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি উৎপাদনের ক্ষমতা দেখা হবে।

অন্যদের জন্য টিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে প্রয়োজন হবে র‌্যান্ডমাইজড প্লেসবো কন্ট্রোল ট্রায়াল – যা প্রমাণ করবে টিকাটি সত্যিই উপসর্গযুক্ত কোভিড প্রতিরোধে কার্যকর।

তবে এমন পরীক্ষাগুলো খুবই ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ফাইজার, মডার্না বা নোভাভ্যাক্স এই পরীক্ষা করবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত।

FDA-এর নতুন নীতির সমালোচনা করে শিশু টিকা বিশেষজ্ঞ ড. পল অফিট বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ-ভিত্তিক টিকা সুপারিশ দিয়েছি। এই নীতিতে বোঝানো হয়েছে যেন এতদিন তা হয়নি, যা ভুল।”

তিনি বলেন, “mRNA টিকাগুলো অত্যন্ত নিরাপদ। বর্তমান নীতির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।”

FDA বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো ভ্যাকসিনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু ড. অফিটের মতে, মানুষের মধ্যে ‘ভ্যাকসিন ক্লান্তি’ তৈরি হয়েছে বলেই গ্রহণযোগ্যতা কমেছে – এটি আস্থার অভাবে নয়।

অন্যদিকে, CDC-র পরামর্শ কমিটির সদস্য ড. নোয়েল ব্রুয়ার বলেন, “এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিকভাবে সংগতিপূর্ণ করে তুলবে। বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি ইতিবাচক।”

তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ২ বছরের নিচে যাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার তুলনামূলক বেশি – তাদের নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়ে গেছে।

FDA-এর নতুন নীতি অনুসারে, CDC যেসব শারীরিক অবস্থাকে উচ্চঝুঁকির বলে চিহ্নিত করেছে, সেগুলোর মধ্যে পড়লে ৬৫ বছরের নিচের ব্যক্তিরাও টিকা গ্রহণ করতে পারবেন। অনুমান করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন আমেরিকান টিকার আওতায় আসতে পারবেন।

তবে যেহেতু অনেকেই ফার্মেসি বা ক্লিনিকে গিয়ে টিকা নেন, তাই কে ঝুঁকিপূর্ণ তা যাচাই কে করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

FDA বলছে, এই নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য দ্রুত টিকা নিশ্চিত করা যাবে, তেমনি অন্যদের ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার আগে যথাযথ প্রমাণও নিশ্চিত করা যাবে।

Leave a Comment

Footer Section