এক হাজার বছরের রহস্য উন্মোচিত: ব্রোমেসওয়েল বালতিতে মিলল দাহ করা মানব-প্রাণীর হাড়

News Desk

এক হাজার বছরের রহস্য উন্মোচিত: ব্রোমেসওয়েল বালতিতে মিলল দাহ করা মানব-প্রাণীর হাড়. Dhakainlight.com

ইংল্যান্ডের সাটন হুতে খুঁজে পাওয়া এক রহস্যময় প্রাচীন বালতির ভেতর অবশেষে মিলল দাহ করা মানব ও প্রাণীর হাড়। এক সময়ের অজ্ঞাত এই বস্তুটির মধ্যে ছিল এক বিশিষ্ট ব্যক্তির দেহাবশেষ এবং একটি অক্ষত চিরুনি, যা হয়তো তার পরিচয় উদঘাটনে সহায়ক হতে পারে।

এই ‘ব্রোমেসওয়েল বালতি’ নামে পরিচিত বস্তুটি প্রথম নজরে আসে ১৯৮৬ সালে, একটি ট্রাক্টরের ধাক্কায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা ভগ্নাংশ বেরিয়ে আসার পর। পরে ২০১২ সালে অতিরিক্ত খণ্ডাংশ আবিষ্কৃত হলেও, সম্পূর্ণ ভিত্তি বা বালতির তলা অংশ কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি — যতদিন না ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে একটি খণ্ডিত মাটির ব্লকের মধ্যে বালতির তলাটি মিলেছে।

সাটন হু, যেটি সপ্তম শতাব্দীর বিখ্যাত ‘ভূত জাহাজ’ কবরের জন্য পরিচিত, সেখানেই পাওয়া গেছে এই বিরল বালতিটি। বালতিতে খোদাই করা আছে উত্তর আফ্রিকার একটি শিকারের দৃশ্য, যেখানে দেখা যায় যোদ্ধা, অস্ত্রশস্ত্র, সিংহ এবং একটি শিকারি কুকুর। গবেষকদের ধারণা, এই বালতিটি বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে, সম্ভবত আধুনিক তুরস্কের আন্তিওকে তৈরি হয়েছিল এবং শত বছর পর তা চলে আসে ব্রিটেনের পূর্ব উপকূলে।

নতুনভাবে পাওয়া বালতির নিচের অংশে দেখা গেছে সূক্ষ্ম খোদাই — যোদ্ধার মুখ, ঢাল, পায়ের ছাপ। তবে সবচেয়ে বড় চমক ছিল এর ভেতরে পাওয়া দাহকৃত হাড় এবং একটি দ্বিমুখী হরিণশিং-এর চিরুনি। এই চিরুনি থেকে সংগ্রহ হতে পারে প্রাচীন ডিএনএ, যা হয়তো মৃত ব্যক্তির পরিচয় উদঘাটনে সাহায্য করবে।

সাটন হুর অ্যাসিডযুক্ত মাটিতে অন্যান্য কঙ্কাল ও কাঠ পচে গেলেও এই চিরুনিটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর এতে স্পষ্ট হয় যে, এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কবরস্থান ছিল, সম্ভবত সমাজে উচ্চ অবস্থানধারী কেউ।

এছাড়া বালতির ভেতরে পাওয়া গেছে কিছু উদ্ভিদের চিহ্ন, যা সেই সময়কার জলবায়ু, পরিবেশ ও কবরস্থ করার ঋতুর বিষয়ে তথ্য দিতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

জাতীয় ট্রাস্টের প্রত্নতত্ত্ববিদ অ্যাঙ্গাস ওয়েইনরাইট বলেন, “এই বালতিটি কেন সমাহিত হয়েছিল, সেটি এক রহস্য ছিল। কিন্তু এখন পরিষ্কার, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দাহকৃত দেহাবশেষ ধারণ করেছিল।”

বালতিটি যেভাবে দূর বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য থেকে সাফোকের এই কোণায় এসে পৌঁছেছিল তা এখনো এক প্রশ্ন। হয়তো এটি কূটনৈতিক উপহার ছিল, অথবা কোনো স্যাক্সন ভাড়াটে সেনার সংগ্রহ। তবে এটিকে কেবল একটি বিচ্ছিন্ন বস্তু না ভেবে এখন একটি পূর্ণাঙ্গ কবরপ্রথার অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

টাইম টিমের অ্যাঙ্গলো-স্যাক্সন বিশেষজ্ঞ হেলেন গিক বলেন, “ব্রোমেসওয়েল বালতির রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হলো — এটিই প্রথম বালতি যা একটি দাহকৃত কবর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি সাটন হুর অদ্ভুত ইতিহাসের আরেকটি অনন্য সংযোজন।”

এই আবিষ্কার সাটন হুর বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক জগতকে আরও সমৃদ্ধ করল — যেখানে রয়েছে রাজকীয় কবর, জাহাজ সমাহিতি, ঘোড়ার কবর আর এখন এই ‘স্নান-বালতি’ সমাধি। গবেষকরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এখান থেকে আরও বহু চমকপ্রদ তথ্য উঠে আসবে।

Leave a Comment

Footer Section