আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইউরোপীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউ বলেছে, তারা এখনো আলোচনার মাধ্যমে সম্মানজনক ও পারস্পরিক লাভজনক একটি চুক্তি করতে চায়, তবে হুমকি দিয়ে কোনো সমঝোতা সম্ভব নয়।
ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোশ সেফকোভিচ বলেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক অতুলনীয় এবং এটি পারস্পরিক সম্মানেই পরিচালিত হওয়া উচিত। একইসঙ্গে তিনি জানান, ইইউ নিজের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে জবাব দিতে সক্ষম। তিনি শুক্রবার এক ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগোচ্ছে না, তাই ১ জুন থেকে শুল্ক কার্যকর করা হবে। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “আমি কোনো চুক্তির খোঁজে নেই, চুক্তি আমরা ঠিক করে ফেলেছি।” তবে ইউরোপীয় কোনো কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে কিছুটা ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, আর আমদানি করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ট্রাম্পের অভিযোগ, ইউরোপ থেকে আমদানির হার অনেক বেশি, কিন্তু রপ্তানি তুলনায় কম হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতার’ শিকার হচ্ছে।
ইইউর নেতারা ট্রাম্পের হুমকির কড়া সমালোচনা করেছেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, “এই পথে আমাদের হাঁটা উচিত নয়, শান্তিপূর্ণ আলোচনাই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।” ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, তাঁরা উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী, তবে প্রয়োজন হলে কঠিন জবাব দিতেও প্রস্তুত। জার্মান ও ডাচ নেতারাও সমঝোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের স্টিফেন মুর বলেন, ট্রাম্প হয়তো চায় ইউরোপের কিছু দেশকে আলাদা করে আলোচনায় বসানো হোক। তার মতে, ট্রাম্প শুধু যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, গোটা বিশ্বকেই চীনের প্রভাব থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনের কিছু পণ্যে শুল্ক কমালেও ইউরোপীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ কর বহাল রেখেছে। জবাবে ইইউ ২০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিলেও আপাতত তা স্থগিত রয়েছে। তবে ইইউ বর্তমানে আরও ৯৫ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যে কর আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির রেশ পড়েছে বাজারেও। শুক্রবার ইউরোপের শেয়ারবাজার বড় ধাক্কা খেয়েছে। জার্মান ড্যাক্স ও ফ্রান্সের কাক ৪০ সূচক ১.৫ শতাংশের বেশি পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকও কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্পের এমন হুমকি রাজনৈতিক বার্তাবহ হলেও এর প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর। ব্যবসায়ী মহল এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে বিষয়টি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে, বিশেষত অ্যাপলসহ প্রযুক্তি খাতে শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত ট্রাম্পের বক্তব্যে আরও স্পষ্ট হয়েছে।
4o