আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিবন্ধনের শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ১০ মে শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক সংলাপে অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব দেয় দলটি।
ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী আমাদের মতো আঞ্চলিক দলের পক্ষে নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা চেয়েছি, আঞ্চলিক দলের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হোক।” তিনি আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবিও আলোচনায় উঠে এসেছে।
নতুন সংবিধান প্রণয়ন বা সংস্কারের প্রসঙ্গে মাইকেল চাকমা বলেন, “আমরা চাই এই প্রক্রিয়ায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু না হলে সারাদেশেই প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “সংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। এখন ভুল করলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা বাড়বে।”
১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইউপিডিএফ নেতার অভিযোগ, “শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। চুক্তিটি ছিল সাংবিধানিক ভিত্তিহীন ও দুর্বল। সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় যেকোনো সরকার চাইলে এটি বাতিল করতে পারে।”
অনেকেই ইউপিডিএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলার বিষয়ে সরাসরি জবাব দেন মাইকেল চাকমা। তিনি বলেন, “আমরা কী ধরনের সংগঠন, কী নিয়ে রাজনীতি করি—তা আমাদের কার্যক্রমেই স্পষ্ট। কে কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।”
আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, “নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত। ইউপিডিএফ কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণের পক্ষে নয়। দ্রুত সংস্কার শেষ করে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক।”
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ইউপিডিএফ জানায়, ১৫ মে বিকেলে কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনা হবে।
আজকের সংলাপে ইউপিডিএফের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। তাদের নেতৃত্ব দেন মাইকেল চাকমা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন—বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইউপিডিএফ সদস্য জিকো ত্রিপুরা এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সদস্য সুনয়ন চাকমা।
আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।