অ্যাডলফ হিটলারের আত্মহননের পেছনের দিনগুলো

News Desk

অ্যাডলফ হিটলারের আত্মহননের পেছনের দিনগুলো. Dhakainlight.com

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক ভয়ংকর অধ্যায় ছিল অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি জার্মানির উত্থান ও পতন। কিন্তু ইতিহাসের পাঠকদের অনেকেই জানেন না, এই সময়ের একটি বড় অংশ হিটলার কাটিয়েছেন একটি গোপন সামরিক ঘাঁটিতে—‘ভল্ফশাঞ্জে’ বা বাংলায় যার অর্থ ‘নেকড়েদের আস্তানা’।

জার্মান ইতিহাসবিদ ফেলিক্স বোয়েরের বই ‘পতনের পূর্বে ভল্ফশাঞ্জে হিটলারের বছরগুলো’ হিটলারের সেই গোপন জীবনের নানা দিক উন্মোচন করেছে। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে পূর্ব প্রুশিয়ার গভীর জঙ্গলে অবস্থিত এই বাংকারেই তিনি ৮০০ দিনের বেশি সময় কাটান—যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন, ষড়যন্ত্রের শিকার হন এবং ক্রমে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

১৯৪১ সালের ২২ জুন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন হিটলার। শুরুতে দ্রুত বিজয়ের আশা করলেও সময় যত এগিয়েছে, যুদ্ধের বিপর্যয় এবং ব্যক্তিগত সংকট ক্রমাগত তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। ভল্ফশাঞ্জেতে নির্জন ও মশাবহুল পরিবেশে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মানসিক চাপে। বাংকারজীবনে তিনি ঘুমহীনতায় ভুগতেন, শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন, এবং দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে ওঠেন।

এ সময় তাঁর সিদ্ধান্তগ্রহণের পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়ে ওঠে। দিনে ঘুমিয়ে রাতভর বৈঠক করতেন। নিজের সময়সূচিতে সবাইকে মানিয়ে নিতে বাধ্য করতেন। যেকোনো নতুন মুখকে তিনি অপছন্দ করতেন এবং সবসময় নিজের ঘনিষ্ঠদের নিয়েই থাকতে চাইতেন। তাঁর মিটিংগুলোতে বাইরের নতুন চিন্তাধারা বা দৃষ্টিভঙ্গি কখনো প্রবেশ করতে পারত না। এই একঘেয়েমি ও চাপা পরিবেশে সিদ্ধান্তহীনতা বাড়তে থাকে। স্টালিনগ্রাদের বিপর্যয়ের পর তাঁর মানসিক ও শারীরিক অবনতি আরও তীব্র হয়।

১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ভল্ফশাঞ্জেতে হিটলারকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। টাইমবোমা বিস্ফোরিত হলেও তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। এরপর থেকেই তিনি আরও সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন এবং চারপাশের সবার ওপর অবিশ্বাস করতে থাকেন। ক্রমাগত ওষুধ নির্ভরতা, বিষণ্নতা ও নিঃসঙ্গতা তাঁকে একপ্রকার মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর বাঁ হাত ও পা কাঁপতে থাকে, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজের বাংকারে একপ্রকার বন্দি জীবন কাটাতে শুরু করেন।

১৯৪৪ সালের ২০ নভেম্বর তিনি বার্লিন ফিরে আসেন এবং নতুন চ্যান্সেলরি ভবনের নিচের বাংকারে আশ্রয় নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ অধ্যায়টি সেখানেই রচিত হয়। ১৯৪৫ সালের এপ্রিলে সোভিয়েত বাহিনী বার্লিন ঘিরে ফেলে। হিটলারের বাংকার থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে সোভিয়েত গোলাবর্ষণ চলছিল।

অবশেষে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল দুপুরে হিটলার তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচরদের বিদায় জানিয়ে বাংকারে ইভা ব্রাউনের সঙ্গে আত্মহত্যা করেন। ইভা বিষাক্ত ক্যাপসুল গ্রহণ করেন, আর হিটলার নিজের মাথায় গুলি করেন। তাঁদের মৃতদেহ পরবর্তীতে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এভাবেই ভল্ফশাঞ্জে ও বার্লিনের বাংকারজীবনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ৮ মে ১৯৪৫। হিটলারের আত্মহনন হয় মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধের এক প্রতীকী পরিণতি।

Leave a Comment

Footer Section