অভয়নগরের সহিংস ঘটনায় খুন ও অগ্নিসংযোগ: শান্তি ফেরাতে চাই দ্রুত বিচার ও মানবিক সহায়তা

News Desk

অভয়নগরের সহিংস ঘটনায় খুন ও অগ্নিসংযোগ: শান্তি ফেরাতে চাই দ্রুত বিচার ও মানবিক সহায়তা. Dhakainlight.com

যশোরের অভয়নগরের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে সাম্প্রতিক এক ভয়াবহ সহিংসতা মানুষকে আবারও নাড়া দিয়েছে। বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামকে নির্মমভাবে খুন করার পর মতুয়া সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলার সময় শতাধিক উত্তেজিত ব্যক্তি ১৮টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় এবং পার্শ্ববর্তী বাজারে দোকান ভাঙচুর করে। এই সহিংসতায় শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন নারী-পুরুষ অনেকে, অনেক শিশু ভয় পেয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

এলাকাটি পরিদর্শনে গিয়ে অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ জানান, পোড়া ঘরবাড়ি থেকে এখনও পোড়ার তীব্র গন্ধ আসছে। ঘরগুলোর মধ্যে আছে পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্র, পোশাক, বাইসাইকেল, রান্নার পাত্র, মোটরসাইকেল। এক নারী জানান, হামলার সময় তাঁর সন্তানরা খাটের নিচে লুকিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচায়, কিন্তু তারা এখনও মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেনি। কারও কারও ঘরে এখনও রান্নার কিছুই অবশিষ্ট নেই—শুধু পোড়া ধান, ছাই আর তীব্র অসহায়ত্ব।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার থেকে ৩০ কেজি চাল, ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডিল টিন ও কম্বল দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে চাল, ডাল, তেল দেওয়া হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাঁধবে কোথায়, চুলা তো পুড়ে গেছে। একজন নারী বললেন, তাঁর বাড়িতে তিন দিনব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠান চলছিল, কিন্তু হামলায় তা পণ্ড হয়। অনেকেই আগুনে মার খেয়েছেন, বাদ্যযন্ত্রও পুড়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, ফলে আগুন দ্রুত নেভানো যায়নি।

অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামকে খুন করার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। পাশাপাশি যারা এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে আরেকটি অপরাধ—সাম্প্রদায়িক হামলা—চালিয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেউ যেন ‘প্রতিবাদের নামে প্রতিশোধ’ নিতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় এই ধরনের হামলা আমাদের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

এই ঘটনার পেছনে রাজনীতি ও প্রতিহিংসার যে রূঢ় বাস্তবতা কাজ করছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো, কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তার মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানো। সম্মিলিত চেষ্টায় তবেই আমাদের সমাজে শান্তি ফিরবে।

Footer Section