পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের পর ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে মাঠে নেমে পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তাদের ১১ দিনের বিশেষ প্রচার কর্মসূচি ‘তেরঙা–যাত্রা’। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সেনাবাহিনীর ‘বীরত্বগাথা’ তুলে ধরা হচ্ছে।
দিল্লিতে গতকাল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলীয় শীর্ষ নেতারা—অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, রাজনাথ সিংসহ অন্যান্যরা।
যদিও বিজেপি বলছে, এটি একেবারেই রাজনৈতিক নয়, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যেই এই যাত্রা। তাদের দাবি, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে যেসব ‘অপপ্রচার’ হচ্ছে, তার জবাব দিতেই এই উদ্যোগ। জনগণকে ‘প্রকৃত সত্য’ জানানো হবে বলেও দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্লা জানান, ১৩ মে শুরু হওয়া এই যাত্রা চলবে ২৩ মে পর্যন্ত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে, তেরঙা–যাত্রার মাধ্যমে সেটাই তুলে ধরা হবে।
অপারেশন সিঁদুরের চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতি এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে ইতিমধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকীকরণ এবং বাণিজ্য স্বার্থে ভারত আগেভাগেই অভিযান থামাতে বাধ্য হয়েছে। এসব প্রশ্নের জবাব দিতেই বিজেপি এবার সরাসরি জনসংযোগে নেমেছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীরা সংগঠিত হওয়ার আগেই বিজেপি মাঠে নেমে পড়েছে। বিশেষ করে আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে অপারেশন সিঁদুরকে প্রধান প্রচার বিষয় হিসেবে ব্যবহার করতে চায় দলটি। জাতগণনা এবং সামরিক সাফল্য—এই দুই বিষয় হতে পারে বিজেপির তুরুপের তাস।
প্রধানমন্ত্রী মোদি গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য দাবি করেন। বিজেপি এই বক্তব্যকে সামনে রেখেই তেরঙা–যাত্রায় অংশ নিচ্ছে। এই প্রচার কার্যক্রমে দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে চায় তারা।
বিজেপির মতে, এই যাত্রার মাধ্যমে জনগণ জানতে পারবে ভারতের সেনারা কতটা সাহসিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়েছে এবং মোদি সরকার কিভাবে দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছে। এই যাত্রা শুধু সেনাবাহিনীর সাফল্যের প্রচার নয়, একইসঙ্গে সরকারের প্রতি আস্থা অর্জনের একটি কৌশলগত প্রচেষ্টাও।
সবমিলিয়ে বলা যায়, সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে বিজেপির এই প্রচার তৎপরতা শুধু জনমত গঠনের জন্য নয়, আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়েও বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।