নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করতে চাওয়ার মতো ইচ্ছা প্রকাশ অনুচিত ছিল। তিনি বলেন, ইউনূস যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন ২০ কোটি মানুষ তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিল—এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। তাঁর মতে, এমন বিপুল জনসমর্থনের পর দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দেওয়া রাজনীতিতে অনভিজ্ঞতারই প্রতিফলন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘জনদুর্ভোগ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন’ শীর্ষক গণশক্তি সভার এক মতবিনিময় সভায় আজ বুধবার তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে রাজনীতি বুঝতে হবে, রাজাকে রাজনীতি জানতে হয়। তিনি একজন মেধাবী ব্যক্তি এবং চাইলে তা সহজেই রপ্ত করতে পারেন। তবে ‘করিডোর দেওয়ার’ মতো মন্তব্য রাজনীতির বাস্তবতা বিবেচনায় অবিবেচকের কাজ।
তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই, কিন্তু সেটি যেন প্রকৃত অর্থে জনগণের কল্যাণে হয়। কোনো একটি দলকে বাদ দিয়ে অন্য দলকে বসানোর লড়াই নাগরিক ঐক্যের লক্ষ্য নয়। মানুষ যদি ‘বি’ দলকে ভোট দেয়, তা মেনে নেওয়ার মানসিকতা গণতন্ত্রের অংশ। প্রত্যাখ্যান মানে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মান্না বলেন, একজন সংসদ সদস্য যেন নিজের এলাকায় সর্বময় ক্ষমতা না হয়ে ওঠেন, সেটি নিশ্চিত করতেই সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্ত নির্বাচনের বিকল্প নেই। এমন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারবে।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকারই পারে জনগণের কথা তুলে ধরতে। তাই এমন প্রশাসনিক কাঠামো চাই, যেখানে মানুষের বক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ও নদীবন্দর দখলমুক্ত করতে পারেনি। এটিই সংস্কার ছিল, কিন্তু তারা সে সাহস দেখায়নি। কারণ সরকার বড় মিছিলকে ভয় পায়। এমনকি মিছিলের মুখে আদালতের রায় বদলে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন, যেমন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা।
অধ্যাপক ইউনূসের মেয়াদ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মান্না প্রশ্ন তোলেন, পাঁচ বছর তাঁকে ক্ষমতায় রাখার প্রস্তাবের ভিত্তি কী? নির্বাচন ছাড়া কি তিনি দায়িত্বে থাকবেন? যদি কেউ নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান, তবে তা হিতে বিপরীত হবে। বরং জনগণকে বোঝাতে হবে—কারা চোর, তাঁদের ভোট না দেওয়াই কর্তব্য।
গণমুক্তি জোটের মহাসচিব মো. আক্তার হোসেন বলেন, সচিবালয়ে অস্থিরতা তৈরি হতাশাজনক। সরকারি কর্মচারীদের উচিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। কেউ ব্যর্থ হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান থাকা উচিত।
সভায় আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সচিব ওমর ফারুক, নাগরিক মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী আহসান উল্লাহ, মানবাধিকার কর্মী আয়েশা সিদ্দিকা, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, নারী নেত্রী ফেরদৌসী আক্তারসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বক্তারা রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, সুশাসন ও নির্বাচনী সংস্কারের ওপর জোর দেন।