অগ্রাধিকার ব্যাংকিং সেবার বাজার বড় হচ্ছে

News Desk

অগ্রাধিকার ব্যাংকিং সেবার বাজার বড় হচ্ছে. Dhakainlight.com

দেশে অগ্রাধিকার ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক বাড়ছে হু হু করে। এক সময় এই সুবিধা কেবল সমাজের উঁচু শ্রেণির জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ আয়ের পেশাজীবীরাও এই সেবার আওতায় আসছেন। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের মন জয় করতে শুরু করেছে বিশেষ সেবা দিয়ে, যার ফলে নতুন একটি আর্থসামাজিক শ্রেণির জন্ম হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে অগ্রাধিকার ব্যাংক গ্রাহকের সংখ্যা এক লাখের বেশি। তাঁদের আমানতের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

ব্যাংকগুলো এসব গ্রাহকের জন্য জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী কিংবা ঈদের মতো উৎসবে বাড়িতে কেকসহ উপহার পাঠাচ্ছে। আবার পরিবারের জন্য রয়েছে তারকা হোটেলে খাওয়া, বিমানবন্দর লাউঞ্জ ও গাড়ি ব্যবহার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কেনাকাটায় ছাড়ের সুবিধা।

এই সেবা নিতে হলে সাধারণত ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত থাকতে হয়। ফলে যাঁরা ব্যাংকে বড় অঙ্কের লেনদেন করেন বা সঞ্চয় রাখেন, তাঁদের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠছে ব্যাংক।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রথম শুরু করে

১৯৯৯ সালে বহুজাতিক ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড (প্রথমে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ) এই সেবা চালু করে। এরপর ২০০৯ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পরে প্রাইম ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ একে একে অনেক ব্যাংক এই সেবায় যুক্ত হয়।

সিটি ব্যাংক সবচেয়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। তারা “সিটিজেম” নামে একটি পৃথক সেবা চালু করেছে, যেখানে ৭৫ লাখ টাকা জমা রাখলেই গ্রাহক হওয়া যায়। এখানে সৌন্দর্যসেবা, ফিটনেস, ভ্রমণ, কেনাকাটা—সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকরা বিশেষ ছাড় ও সুবিধা পান।

ইস্টার্ন ব্যাংকের চমকপ্রদ অগ্রগতি

ইস্টার্ন ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা জমা রাখলেই গ্রাহক অগ্রাধিকার সুবিধা পান। বর্তমানে ব্যাংকটির ১০ হাজার ৫০০ গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের আমানতের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তানজেরী হক, যিনি ব্যাংকটির অগ্রাধিকার ও নারী ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান, বলেন—“আমরা বছরে পাঁচ-ছয়বার নানা উপলক্ষে গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছাই। এতে গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।”

ব্র্যাক ব্যাংকের বিস্তার

প্রিমিয়াম ব্যাংকিং নামে ২০০৯ সালে ব্র্যাক ব্যাংক এই সেবা চালু করে। ৩০ লাখ টাকা আমানতে গ্রাহক হওয়া যায়। বর্তমানে ব্যাংকটির ১৫ হাজার গ্রাহকের আমানত ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ব্যাংকটি দেশের বাইরের অর্থনৈতিক অঞ্চলেও এই সেবা ছড়িয়ে দিতে চায়।

সিটি ব্যাংকের অগ্রাধিকার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তাঁদের আমানতের পরিমাণ ১৫ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। ব্যাংকটি শাখার বাইরেও সাতটি সিটিজেম সেন্টারের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে।

অন্য ব্যাংকের উদ্যোগ

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ‘প্রিভিলেজ ব্যাংকিং’ নামে এই সেবা দেয়। এখানে ৪০ লাখ টাকা আমানতে গ্রাহক হওয়া যায়। গ্রাহক সংখ্যা ২২০০, আমানত ১,৬৫০ কোটি টাকা।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ‘ইম্পেরিয়াল’ নামে এই সেবা দেয়, যেখানে ২৫ লাখ টাকা জমায় গ্রাহক হওয়া যায়। বর্তমানে ১৭ হাজার ৮৪০ জন গ্রাহকের আমানত ৬ হাজার কোটি টাকা।

প্রাইম ব্যাংক ‘মোনার্ক’ নামে ২০১৪ সালে সেবা চালু করে। ২০ লাখ টাকা আমানতে সেবা মেলে। বর্তমানে ৭ হাজার ৫০০ গ্রাহকের আমানত ৫ হাজার কোটি টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংক ২০১৭ সালে ‘ইস্টিম’ নামে সেবা চালু করে। এখানে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখলে সেবা মেলে। এই সেবায় ১৬ হাজার ৬২৮ গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের আমানত ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

ডাচ্‌বাংলা ব্যাংক, এইচএসবিসি, মধুমতি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকও ভিন্ন নামে এই সেবা চালু করেছে।

গ্রাহকদের চাহিদাই এই প্রবণতার কারণ

অগ্রাধিকার ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, এখনকার গ্রাহকেরা ব্যক্তিগতকৃত এবং সময় সাশ্রয়ী সেবা চান। তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব চান, বিনিময়ে দীর্ঘমেয়াদি লেনদেন নিশ্চিত করেন। ব্যাংকের জন্য এটি শুধু আয় নয়, ব্র্যান্ড ভ্যালুও গড়ে তোলে।

এ কারণে নতুন ব্যাংকগুলো এই সেবা চালু করছে, আর পুরোনোগুলো নতুন নতুন সুবিধা সংযোজন করছে।

আপনি যদি উচ্চ আয় করেন, নিয়মিত বড় অঙ্কের লেনদেন করেন বা বড় অঙ্কের সঞ্চয় রাখতে চান, তাহলে অগ্রাধিকার ব্যাংকিং আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। ব্যাংক শুধু আপনার টাকা রাখবে না, জীবনের নানা পরিসরে আপনার পাশে দাঁড়াবে।

Leave a Comment

Footer Section