চীনের শিক্ষার্থী ইউরং লুয়ানা জিয়াং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের সমাবর্তনে একটি আবেগময় বক্তব্য দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। ২৯ মে দেওয়া এই বক্তৃতা শুধু প্রশংসাই পায়নি, বরং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে সমানভাবে বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘোষণা দেয়, আর সে প্রেক্ষাপটেই লুয়ানার বক্তব্য নতুন মাত্রা পেয়েছে।
লুয়ানার ভাষণে উঠে আসে সহানুভূতি, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান ও মানবিক সহাবস্থানের বার্তা। তিনি বলেন, “আমরা একে অপরকে অস্বীকৃতি না করেই ওপরে উঠতে পারি। আমরা শত্রু নয়, মানুষ হিসেবে পরস্পরকে দেখলেই নিজের মানবতা খুঁজে পাই।” এই বক্তব্য অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে তা ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়।
তবে বিতর্ক শুরু হয় লুয়ানার পারিবারিক পটভূমি নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল মহলের এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়, লুয়ানা ও তাঁর পরিবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে যুক্ত। বলা হয়, তাঁর বাবা একটি এনজিওতে কাজ করেন, যা সিসিপির হয়ে কূটনৈতিক ভূমিকা রাখে। যদিও চীনের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়, ঐ সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফাউন্ডেশনগুলোর সহায়তায় চলে। বিবিসি এসব দাবির কোনোটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
সমাবর্তনে দেওয়া বক্তব্যে লুয়ানা হার্ভার্ডে পড়াশোনা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার মূল্যবোধের প্রশংসা করে বলেন, “আমরা একে অপরের ঐতিহ্য শিখেছি, একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে শিখেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভাগাভাগি করা ভবিষ্যতে বিশ্বাস করতে চাই।”
লুয়ানার একাডেমিক পথচলা শুরু হয়েছিল যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ সিক্সথ ফরম কলেজ থেকে, এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বর্তমানে হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি প্রথম চীনা নারী যিনি হার্ভার্ড সমাবর্তনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন।
তাঁর এই অর্জন নিয়ে কেউ কেউ গর্বিত হলেও, অনেকে মনে করছেন, তাঁর অভিজাত সামাজিক অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ অধিকাংশ চীনা শিক্ষার্থীর বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। এক ব্যবহারকারী ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন, “এই প্রতিভা যুক্তরাষ্ট্রেই থাকুক, আমাদের কাছ থেকে দূরে।” অন্যদিকে কেউ কেউ বলেছেন, “তাঁর বক্তব্য চীনা তরুণদের মনের কথা বলেছে,” “তিনি হয়তো দুনিয়াকে বদলাতে পারেননি, কিন্তু তাঁদের কানে পৌঁছেছেন।”
এই ঘটনাটি চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ভূমিকা নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। হার্ভার্ডে বর্তমানে ৬ হাজার ৮০০-এর বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছে, যাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই চীনা, আর ৭০০ জনেরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থী রয়েছেন।
লুয়ানার বক্তব্য এই মুহূর্তে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও জনমানসে জায়গা করে নিয়েছে। একটি বক্তৃতা কিভাবে বিশ্বমঞ্চে মানবতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও জিওপলিটিকসকে একত্রে যুক্ত করে তা এই ঘটনায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।