ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার এক প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছেন, হামাসের গাজাভিত্তিক নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ার “সম্ভবত” নিহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “আমরা হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে নির্মূল করেছি। হত্যাকারীদের নেতাদের—মোহাম্মদ দেইফ, ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং সম্ভবত মোহাম্মদ সিনওয়ার—আমরা নির্মূল করেছি।”
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার খান ইউনিসে ইউরোপীয় হাসপাতালে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। ওই হামলায় ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং অন্তত ৫০ জন আহত হন বলে জানায় ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ধারণা করা হচ্ছে, মোহাম্মদ সিনওয়ার এই হামলার সময় হাসপাতালে ছিলেন এবং সেখানেই মারা যান।
মোহাম্মদ সিনওয়ার ছিলেন ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই, যিনি অক্টোবর মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় দক্ষিণ গাজায় নিহত হন। এখনো হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এটি ছিল নেতানিয়াহুর কয়েক মাস পর প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। সেখানে তিনি জানান, ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করবে না।
তিনি বলেন, “আমাদের বাহিনী গাজার অধিকাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। এই অভিযান শেষে পুরো গাজা হবে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারে, যদি তাতে জিম্মি মুক্তির বিষয়টি থাকে। তবে যুদ্ধ পুরোপুরি থামবে শুধুমাত্র কিছু শর্ত পূরণ হলে—যেমন গাজা সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণ, হামাস সরকার পতন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত স্বেচ্ছা-প্রব্রজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
নেতানিয়াহু বলেন, “গাজা নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং আমরা ট্রাম্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব, যা অত্যন্ত যৌক্তিক ও বিপ্লবাত্মক। যারা গাজা ছেড়ে যেতে চায়, তাদেরকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ন্ত্রণে নেবে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করবে এবং গাজাকে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তুলবে। এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের দ্বিরাষ্ট্রনীতি থেকে এক অভূতপূর্ব বিচ্যুতি এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক চুক্তি প্রসঙ্গে ইসরায়েলের “সম্পূর্ণ সমন্বয়” রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যেকোনো চুক্তি অবশ্যই ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র থেকে বিরত রাখতে হবে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে।”
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে, ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “ইসরায়েল একটি রাষ্ট্র হিসেবে আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রাখে, বিশেষ করে সেই শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা আমাদের ধ্বংসের হুমকি দেয়।”
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয়, গাজা ও বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট আরও গভীর হতে পারে। ইসরায়েলের দিক থেকে স্পষ্ট বার্তা—এই যুদ্ধ থামবে না, যতক্ষণ না হামাসকে গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং পুরো অঞ্চল ইসরায়েলের কড়া নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।