সৌদি আরবের মক্কায় একাশিয়ার পশুর হাটে কোরবানির প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে।

News Desk

সৌদি আরবের মক্কায় একাশিয়ার পশুর হাটে কোরবানির প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে।. Dhakainlight.com

হারাম শরিফ থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এই এলাকার তিন দিক ঘেরা উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তৃত ছাউনির নিচে রাখা হয়েছে হাজার হাজার খাসি। পবিত্র হজ ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে সুপরিকল্পিত পশুবাজার। সরকারের কড়া নির্দেশনার কারণে নির্ধারিত স্থানের বাইরে কোরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ, তাই একাশিয়ার এই হাট হাজি ও স্থানীয়দের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হয়ে উঠেছে।

সরকারিভাবে হজের জন্য নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানির খরচ রাখা হয়েছে ৭১৫ রিয়াল। তবে যারা নিজের পছন্দের খাসি বেছে নিতে চান, তারা একাশিয়ার হাটে এসে নিজেরা পশু কিনে রাখছেন। ঈদের দিন নির্ধারিত জবাইয়ের পরে মাংস প্রক্রিয়াজাত করে পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রাহকের হাতে।

একাশিয়ার পশুবাজারে খাসির দাম শুরু ৫০০ রিয়াল থেকে, যা দেড় হাজার রিয়াল পর্যন্ত উঠছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ৫০০ থেকে ৭৫০ রিয়াল দামের খাসির। হাটে বিক্রির জন্য সুদান থেকে প্রতিদিন নতুন খাসি আনা হচ্ছে। কিছু খাসি আসে ইয়েমেন থেকেও। এখানকার বেশির ভাগ ব্যবসায়ী সৌদি নাগরিক হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের একজন মো. রুবেল, যিনি ঢাকার ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদের খতিব মুফতি সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে সৌদিতে ব্যবসা গড়েছেন।

রুবেলের ভাষ্যমতে, এবারের হজ ও কোরবানিকে ঘিরে শুধু তাঁরাই বিক্রির জন্য এনেছেন ৫ হাজার খাসি। পুরো একাশিয়ার বাজারে প্রায় ৮০ হাজার খাসি কোরবানির পরিকল্পনা রয়েছে। কোরবানির পর এসব পশু জবাই করে পরিষ্কার করতে সময় লাগে পুরো এক দিন। ছাউনির নিচেই চলে কোরবানি, মাংস প্রসেসিং এবং বিতরণ প্রক্রিয়া।

এই হাটে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ মাংস প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত থাকে। ঈদের দিন তাঁরা এসে মাংস সংগ্রহ করেন। কিছু অংশ স্থানীয় দরিদ্রদের মধ্যেও বিতরণ করা হয়। হাটটি সৌদি সরকারের অনুমোদিত এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বর্গা নিয়ে পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি রুবেলদের কাছে এই ছাউনির জায়গা ১৫ দিনের জন্য ভাড়া দিয়েছে ৪০ হাজার রিয়াল।

এই হাটে রয়েছে কোরবানির জন্য নিবেদিত কর্মী বাহিনী এবং সময়ানুগ পরিষেবা। হাজিরা নিজেরা কোরবানি দিতে না চাইলেও এখানে খাসি কিনে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, কারণ নির্ধারিত সময়ে কোরবানি ও মাংস বিতরণ নিশ্চিত করা হয়।

শেষ বিকেলে যখন লেখক একাশিয়া থেকে ফিরছিলেন, তখন মাগরিবের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল। ছাউনির নিচে তখনও জমজমাট কেনাবেচা চলছিল। প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশি মুসলমানদের ঈদের এই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা যেভাবে সুপরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, তা একাশিয়া পশুর হাটে এসে না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

Footer Section