সি চিন পিংয়ের মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে—আলোচনার কেন্দ্রে হার্ভার্ডপড়ুয়া সি মিংজে

News Desk

সি চিন পিংয়ের মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছে—আলোচনার কেন্দ্রে হার্ভার্ডপড়ুয়া সি মিংজে

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মেয়ে সি মিংজেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন কট্টর ডানপন্থী মার্কিন ভাষ্যকার লরা লুমার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, সি মিংজে এখনো ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করছেন এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্যরা তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। যদিও এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

সি মিংজে ২০১৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে নিউইয়র্কারের ২০১৫ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, স্নাতক হওয়ার পর তিনি চীনে ফিরে যান এবং তখন থেকেই অনেকটাই আড়ালে রয়েছেন। তাঁকে জনসম্মুখে তেমন দেখা যায় না। এ কারণেই লুমারের দাবি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।

লুমার তাঁর পোস্টে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ প্রশাসনের শীর্ষ নেতাদের ট্যাগ করে বহিষ্কারের দাবি জানান। তিনি বলেন, “সি চিন পিংয়ের মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করো।” তবে নিউজউইকের পক্ষ থেকে হার্ভার্ড, ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস এবং লুমারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।

এই ইস্যু সামনে আসার পেছনে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বায়ত্তশাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বিরোধ চলছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনসহ নির্দিষ্ট কিছু দেশের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক উসকে উঠেছে। রিপাবলিকান সিনেটরদের পক্ষ থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষার্থী ভিসা বাতিলের দাবিতে নতুন বিলও উত্থাপন করা হয়েছে।

মার্কো রুবিও সম্প্রতি ঘোষণা দেন, সংবেদনশীল বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণরত চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হবে। এই প্রেক্ষাপটেই লুমারের মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত সি মিংজের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বিষয়টি যাচাইযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়নি।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান জানিয়েছে। মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাভাবিক সহযোগিতা বিঘ্নিত হওয়া উচিত নয় এবং যুক্তরাষ্ট্র যেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৈধ অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

সি মিংজে সম্পর্কে জানা যায়, তাঁর জন্ম ১৯৯২ সালে। তিনি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও বিখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী পেং লিউয়ানের একমাত্র মেয়ে। হার্ভার্ডে পড়াশোনাকালীন তিনি ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন এবং সব সময় ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখতেন। ২০০৮ সালে সিচুয়ানে ভূমিকম্পের সময় মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতির আওতায় হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী ভিসা, গবেষণা, এমনকি দাতব্য অনুদান নিয়েও প্রশাসনের বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি হার্ভার্ডের প্রায় ৩০ লাখ ডলারের অনুদান বাতিল করেছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত ডিইআই প্রোগ্রাম, শৃঙ্খলা নীতিমালা পরিবর্তন ও ফেস মাস্ক নিষেধাজ্ঞায় রাজি হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের বিশ্লেষণ বলছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর এমন বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে বছরে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে এবং প্রায় ৩৭০,০০০ চাকরি হুমকিতে পড়তে পারে।

সব মিলিয়ে সি মিংজের নাম ঘিরে যে বিতর্ক উঠেছে, তা এখন কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়; বরং চীন-মার্কিন কূটনৈতিক উত্তেজনা, বৈদেশিক শিক্ষানীতির ভবিষ্যৎ ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ও অভিবাসন নীতিতে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, সি মিংজের নাম তার প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Footer Section