সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পাশের পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ফেলে যাওয়া ৭৫ জনের মধ্যে অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মধ্যে আটজনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মশিউর রহমান জানান, গত ২৬ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বস্তি থেকে পুলিশ প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আটক করে। এরপর তাঁদের একটি পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে দল ভাগ করে রাখা হয়। এর মধ্য থেকে ৭৮ জনকে চোখ বেঁধে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ৯ মে ভোরে সুন্দরবনের গভীর চরে ফেলে যায় বিএসএফ। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে তাঁরা বন বিভাগের সহায়তায় আশ্রয় নেন মান্দারবাড়ি ক্যাম্পে।
পরে ১১ মে রাতে তাঁদের হস্তান্তর করা হয় কোস্টগার্ডের কাছে। প্রথমে মোংলা কোস্টগার্ড অফিসে নেওয়া হয় এবং ১২ মে রাতে তাঁদের সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
এই ৭৮ জনের মধ্যে তিনজন ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের স্বজনদের বরাতে জানা গেছে, বিএসএফের নির্যাতনে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে, খাবার ও চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। থানায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
শ্যামনগর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, কোস্টগার্ডের প্রেস ব্রিফিং শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা ছিল। তবে কর্মকর্তারা রাত ১১টার পর থানায় পৌঁছালে ব্রিফিং করা সম্ভব হয়নি। আজ মঙ্গলবার তাঁদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। অসুস্থ ১০ জনের মধ্যে ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং ২ জনকে স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৬৫ জনকে শ্যামনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের একজনের স্বজন বলেন, বিএসএফের লাঠিপেটায় অনেকের পিঠ ও কোমরের চামড়া উঠে গেছে। অনিক শেখ ও আবু বক্কর নামে দুই ব্যক্তি জানান, নির্যাতনের পর এমনভাবে তাঁদের ফেলে যাওয়া হয় যেন মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা নেই। তাঁরা দ্রুত চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয়ের দাবি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে।
4o