সপ্তাহেই এভারেস্ট জয় করতে চান চার বন্ধু, অক্সিজেন নয় এবার ভরসা অ্যানেসথেটিক গ্যাস!

News Desk

সপ্তাহেই এভারেস্ট জয় করতে চান চার বন্ধু, অক্সিজেন নয় এবার ভরসা অ্যানেসথেটিক গ্যাস!. Dhakainlight.com

মাত্র এক সপ্তাহে এভারেস্ট জয় করতে চান চার সাবেক ব্রিটিশ সেনা। গাইড হিসেবে থাকছে পরিচিত পর্বতারোহী কোম্পানি ফার্টেনবাখ অ্যাডভেঞ্চারস। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো—তারা পাহাড়ি উচ্চতায় শরীরের অক্সিজেনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার (অ্যাক্লিমাটাইজেশন) প্রক্রিয়াটি ছোটাতে ব্যবহার করছেন অ্যানেসথেটিক গ্যাস ‘জেনন’।

সাধারণত এভারেস্টে উঠতে সময় লাগে ছয় থেকে আট সপ্তাহ। কারণ উচ্চতায় শরীর মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তবে লন্ডন থেকে সরাসরি নেপালের কাঠমাণ্ডু হয়ে হেলিকপ্টারে বেস ক্যাম্পে পৌঁছে তারা কয়েক দিনের মধ্যেই শৃঙ্গ ছোঁয়ার লক্ষ্য নিয়েছেন। অভিযানে অংশ নিচ্ছেন এক রাজনীতিবিদ, এক পাইলট, একজন উদ্যোক্তা ও একজন ব্যবসায়ী।

এই গ্যাস ব্যবহার করে অভিযাত্রীদের শরীর আগেভাগে লাল রক্ত কণিকা (রেড ব্লাড সেল) তৈরি করে ফেলবে বলে দাবি ফার্টেনবাখের। এতে শরীর উচ্চতার অক্সিজেনস্বল্প পরিবেশে টিকতে পারবে—এমনটাই তাদের আশা।

তর্কিত ‘জেনন গ্যাস’ এবং ডাক্তারদের উদ্বেগ

জেনন গ্যাস সাধারণত অ্যানেসথেটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়—অর্থাৎ অচেতন করতে এটি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। গ্যাসটি শরীরে ইরিথ্রোপয়েটিন (EPO) নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা রক্তে লাল কণিকার সংখ্যা বাড়ায়।

ফার্টেনবাখ দাবি করেন, তিনি নিজেও এটি ব্যবহার করে আর্জেন্টিনার আকনকাগুয়া এবং পরবর্তীতে এভারেস্ট অভিযানে ইতিবাচক প্রভাব পেয়েছেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে নিয়ে শঙ্কিত।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যান্ড্রু পিকক বলেন, “এটি একটি অ্যানেসথেটিক গ্যাস, যার প্রভাবে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় উচ্চতাজনিত জটিলতা যেমন ব্রেইনে পানি জমা বা ফুসফুসে তরল জমা হলে তা জীবনঘাতী হতে পারে।”

আন্তর্জাতিক পর্বতারোহণ সংস্থা UIAA জানিয়েছে, জেনন ব্যবহারে সাময়িকভাবে EPO বেড়ে গেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয়, এবং কার্যকরভাবে রক্তে লাল কণিকা বাড়ানোর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস ও শ্বাসপ্রশ্বাসে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

২০১৪ সাল থেকেই জেনন গ্যাস নিষিদ্ধ করেছে ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (WADA)।

সমালোচনার মুখেও আত্মবিশ্বাসী অভিযাত্রীরা

দলের সদস্য অ্যাল কার্নস, যিনি একজন ব্রিটিশ এমপি, বলেন, “আমরা সবাই সেনা বাহিনীর স্পেশাল ইউনিট থেকে আসা। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আমরা অভ্যস্ত। আমরা আগে থেকেই হাইপোক্সিক টেন্টে ৫০০ ঘণ্টারও বেশি ঘুমিয়েছি, যা উচ্চতার পরিবেশ অনুকরণ করে।”

তবে পর্বতারোহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীর প্রস্তুত না থাকলে মাত্র কয়েক দিনের অভিযানে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

লেখক উইল ককরেল বলেন, “এভারেস্ট এখন আর আগের মতো ‘পর্বতারোহণের চূড়া’ নয়। এখন অনেকেই ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য, এক ধরণের রূপান্তরের অভিজ্ঞতা নিতে আসে। তবে ‘স্পিড এক্সপিডিশন’ অনেকটা সিস্টিন চ্যাপেল-এর দ্রুত দর্শনের মতো—আপনি যাচ্ছেন, কিন্তু অনেক কিছু মিস করছেন।”

নতুন দিগন্ত না কি বিপজ্জনক শর্টকাট?

ফার্টেনবাখ অবশ্য মনে করেন, সময় কম নিলে দুর্ঘটনার ঝুঁটিও কমে যায়। তার মতে, “যত কম সময় আপনি পাহাড়ে থাকবেন, তত কম সময় আপনি ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন।”

তবে ককরেল এর উল্টো যুক্তি দেন—“আপনি যদি কম সময় শরীরকে প্রস্তুত করেন, তাহলে বিপদে পড়লে আপনার শরীর দ্রুতই ভেঙে পড়তে পারে। তখন আপনি সম্পূর্ণভাবে গাইড ও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।”

অ্যাল কার্নস জানিয়েছেন, তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ, আর তিন সপ্তাহের মধ্যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।

এই এক্সপিডিশনের খরচ প্রায় দেড় লাখ ইউরো (প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা)। তবে ফার্টেনবাখ বলছেন, এটি মূলধারার নয়, বরং একটি পরীক্ষামূলক, বিলাসবহুল পন্থা—সবাই যে এই পথে যাবে, তা নয়।

“আমরা তিন ধরনের এক্সপিডিশন দিচ্ছি—দীর্ঘ, মাঝারি ও ছোট। এটা শুধু একটি বিকল্প পথ।”

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—সপ্তাহব্যাপী জেনন-নির্ভর এই অভিযান কি ভবিষ্যতের ট্রেন্ড, না কি এটি পর্বতারোহণের আত্মাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এক বিপজ্জনক শর্টকাট? সময়ই হয়তো এর উত্তর দেবে।

4o

Leave a Comment

Footer Section