শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কী করবেন, কী করবেন না

News Desk

শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কী করবেন, কী করবেন না. Dhakainlight.com

শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে স্মৃতিশক্তির গুরুত্ব অনেক। শুধু ভালো পড়াশোনা নয়, শিশুর আত্মবিশ্বাস, ভাষাজ্ঞান, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও যোগাযোগ দক্ষতার ভিত্তিও গড়ে ওঠে স্মৃতিশক্তির উপর। তাই শিশুর জন্মের পর থেকেই, বিশেষ করে প্রথম পাঁচ বছর, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যা করবেন

খেলার মাধ্যমে শেখানোর চেষ্টা করুন। শিশু খেলতে ভালোবাসে, আর শেখা যদি খেলায় রূপ নেয়, তা হলে সে বিষয়গুলো সহজেই মনে রাখে। মেমোরি গেম, শব্দজট, শব্দ তৈরি বা ধাঁধা জাতীয় খেলা শিশুর স্মৃতিশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

শিশুর কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগান। তাকে কিছু শোনানোর বা দেখানোর পর বলুন, “তুমি চোখ বন্ধ করে সেটা কল্পনা করো,” তারপর জিজ্ঞেস করুন, সে কী দেখল বা বুঝল। এতে করে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।

অন্যকে শেখাতে উৎসাহ দিন। শিশু যখন কোনো কিছু শেখে, তখন যদি অন্য কাউকে তা শেখাতে বলা হয়, সেটি তার স্মৃতিতে আরও ভালোভাবে গেঁথে যায়। এটি আত্মবিশ্বাস ও প্রকাশের দক্ষতাও বাড়ায়।

সক্রিয়ভাবে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গুরুত্বপূর্ণ অংশ হাইলাইট করতে শেখান, ছবি এঁকে বা ছোট ছোট বাক্যে তথ্য ভাগ করে তাকে সাহায্য করুন।

তথ্য ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করে দিন। বড় তথ্য একসঙ্গে দিলে শিশু বিভ্রান্ত হতে পারে, তাই একে ছোট করে উপস্থাপন করলে মনে রাখা সহজ হয়।

নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলায় উৎসাহ দিন। এগুলো শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমায় এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও সহায়ক হয়।

সুষম খাবার দিন। শিশুর খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ডিম, মাছ, ফল, বাদাম ও বীজ রাখুন। এই খাবারগুলো স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। প্যাকেটজাত ও অতিরিক্ত চিনি–যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুম শিশুদের মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে স্কুলে যাওয়া শিশুদের প্রতি রাতে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন।

যা করবেন না

শিশুকে অতিরিক্ত চাপ দেবেন না। মনে রাখতে হবে, সব শিশু একরকম নয়। কারও শেখার গতি কম হতে পারে, সেটা মানিয়ে নিতে হবে।

শিশুর প্রশ্নে বিরক্ত হবেন না। বরং তাকে উৎসাহ দিন প্রশ্ন করতে। তার কৌতূহলের উত্তর দিন ধৈর্য সহকারে।

প্রতিযোগিতার চাপে ফেলবেন না। শিশুকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে তার নিজস্ব গতি ও আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে উৎসাহ দিন।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়িয়ে চলুন। টিভি, মোবাইল, ট্যাবের স্ক্রিনে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে শিশুর মনোযোগ এবং চিন্তাশক্তি কমে যায়। তাই এগুলোর ব্যবহার সময়সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।

যদি এত কিছুর পরও শিশুর স্মৃতি ঠিকভাবে কাজ না করে বা স্কুলে গিয়ে বারবার ভুলে যায়, তাহলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোডেভেলপমেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষাও করা লাগতে পারে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ানো একটি ধৈর্য ও যত্নের বিষয়। ছোট ছোট অভ্যাস, পরিবেশ এবং ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্ককে বিকশিত করা সম্ভব। শিশুকে বোঝার চেষ্টা করুন, তাকে শেখার আনন্দ দিন—স্মৃতিশক্তি আপনা-আপনি গড়ে উঠবে।

Leave a Comment

Footer Section