যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে উচ্চশিক্ষার প্রত্যাশীদের জন্য বড় ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থী ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সব দূতাবাসে প্রেরিত এক স্মারকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভিসার সাক্ষাৎকার নির্ধারণ বা অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া বন্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে যেসব আবেদনকারী এখনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাননি, তাঁদের নাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যালেন্ডার থেকে সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। তবে যাঁদের সাক্ষাৎকার ইতিমধ্যে নির্ধারিত রয়েছে, তাঁরা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বাক্ষরিত স্মারকে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ও বৈদেশিক বিনিময় কর্মসূচির আওতাধীন ভিসাগুলোর জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে। এতে দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে এবং সময়সাপেক্ষ কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা বাড়বে।
এ সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক টানাপোড়েনে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, এসব প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষের সুযোগ দিচ্ছে এবং বৈষম্যমূলক ভর্তি নীতি অনুসরণ করছে। বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বরাদ্দকৃত শত শত মিলিয়ন ডলারের সরকারি তহবিল বন্ধ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আমন্ত্রণ বাতিল করে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। এসব পদক্ষেপের কিছু আদালত স্থগিত করলেও, সামগ্রিকভাবে প্রশাসনের কড়াকড়ি অব্যাহত রয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে কে প্রবেশ করছে তা আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি এবং যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে।
এই সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। যেহেতু মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকাংশেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও গবেষণা অনুদানের ওপর নির্ভরশীল, তাই এই সিদ্ধান্ত তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ওপরও প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি স্থগিতাদেশ দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে এতে উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিকল্প গন্তব্য খুঁজে নিতে বাধ্য হবেন। বিশেষ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারে।
এই অবস্থায় ভিসা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য এখন অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তাঁরা সাক্ষাৎকারের জন্য কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করতে পারবেন না। শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এটি যে একটি গুরুতর প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল একমত।