যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে একটিমাত্র ভোটের ব্যবধানে পাস হয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন কর ছাড় ও ব্যয় বিল। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতৃত্বে ভোটাভুটিতে বিলটি অনুমোদিত হয় ৫১-৫০ ভোটে। সমানসংখ্যক পক্ষে-বিপক্ষে ভোট পড়ায় সিনেটের সভাপতি হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স টাই ভেঙে বিলটির পক্ষে ভোট দেন।
এই ব্যয় বিলটিকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিলটিতে করছাড় বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যয় সংকোচন, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত বাজেট এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বাড়তি খরচ বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে।
তবে বিলটি পাশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের পরিমাণ আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন এই ঋণ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে রিপাবলিকান দলেই মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। তিনজন রিপাবলিকান সিনেটর—টম টিলিস, সুসান কলিন্স এবং র্যান্ড পল—বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন সব ৪৭ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটরও।
বিলটি এখন প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হয়েছে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। প্রতিনিধি পরিষদের কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য বিলের কিছু শর্ত নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তবুও প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসন আশাবাদী যে ৪ জুলাইয়ের আগেই বিলটি আইনে পরিণত করা সম্ভব হবে, যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়।
বিলের আওতায় যেসব পরিবর্তন আনা হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দেওয়া করছাড়ের সম্প্রসারণ, বোনাস ও অতিরিক্ত সময় কাজ করায় প্রাপ্ত আয়ের উপর করছাড়, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ বৃদ্ধি, এবং পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য দেওয়া ডেমোক্র্যাটিক সুবিধাগুলোর বাতিল।
বিতর্কিত অংশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি কমানোর প্রস্তাব নিয়ে। কম আয়ের মানুষের জন্য মেডিকেইড ও খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি ডলার কাটা হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণসীমা আরও ৫ লাখ কোটি ডলার বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। কংগ্রেস যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই সীমা না বাড়ায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ঋণখেলাপির ঝুঁকিতে পড়বে।
বিলটি পাস করাতে শেষ মুহূর্তে আলাস্কার সিনেটর লিসা মুরকৌস্কির সমর্থন পেতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত যুক্ত করা হয়। একটি হলো আলাসকাসহ কয়েকটি রাজ্যে অতিরিক্ত খাদ্যসহায়তা বরাদ্দ, অন্যটি হলো গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ।
রিপাবলিকান সিনেটরদের একটি অংশ বিলের খরচ, ঋণের বোঝা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্পপন্থী অংশ বলছে, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘সামরিক ও আর্থিক নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করবে এবং ‘সরকারি ব্যয়ের লাগাম টানবে’।
তবে বিলটি নিয়ে বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি অনুমোদনের আগে আরও আলোচনা ও সংশোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। ততদিন পর্যন্ত ট্রাম্পের এই বিলকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং জনমত বিভাজন অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।