ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় সংঘটিত এক ভয়াবহ দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বহিষ্কৃত দুই নেতা হলেন তজুমদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেল আহমেদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন ওরফে সজীব। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের কোনো নেতা-কর্মী যেন তাদের সঙ্গে আর কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় আগেই তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকেও সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
তজুমদ্দিন উপজেলায় গত সোমবার দায়ের করা মামলায় শ্রমিক দল, যুবদল, ও কলেজ ছাত্রদলের নেতাসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, এক গৃহবধূর স্বামীকে মারধর ও আটকে রেখে তাঁকে রাতভর দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। মামলার তিন নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন এবং তাঁর দুটি বিবাহ রয়েছে। গত সপ্তাহে দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে বাসায় ডেকে নেন। সেখানে রাতে স্থানীয় কয়েকজন যুবদল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদল নেতা ঘরে প্রবেশ করে তাঁর ওপর হামলা চালান। তাঁকে মারধরের পাশাপাশি আটকে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদে চাপ দেন এবং অর্থ দাবি করেন। প্রথমে চার লাখ টাকা দাবি করা হলেও পরে এক লাখ টাকায় রাজি হন তারা।
পরদিন সকালে প্রথম স্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের অনুরোধ করেন স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তাঁরা তখন প্রথম স্ত্রীকে রেখে স্বামীকে বাইরে নিয়ে যান চা খাওয়ানোর কথা বলে। এরপর ঘরের দরজা জানালা আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। গৃহবধূ চিৎকার করলে আশপাশের নারীরা তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হননি।
এই জঘন্য ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তজুমদ্দিনে বিএনপির দুই পক্ষই পৃথকভাবে প্রতিবাদ মানববন্ধন করে। এর মধ্যে একটি মানববন্ধনে ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।
এদিকে ছাত্রদল জানিয়েছে, তারা অভিযুক্তদের কোনোভাবেই সংগঠনে রাখতে রাজি নয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করা হবে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। বিষয়টি এখন জাতীয়ভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।