ভারত–পাকিস্তান: ইতিহাসজুড়ে যুদ্ধ ও সংঘাতের ধারাবাহিকতা

News Desk

ভারত–পাকিস্তান: ইতিহাসজুড়ে যুদ্ধ ও সংঘাতের ধারাবাহিকতা. Dhakainlight.com

কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আজ আবারও গোলাবর্ষণের ঘটনা নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলা চালায়, যাতে ২৬ জন নিহত হন। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে এই পরিস্থিতি দুই দেশের দীর্ঘ ইতিহাসের একটি ধারাবাহিক অংশ, যেখানে বারবার যুদ্ধ ও সংঘাতে জড়িয়েছে উপমহাদেশের এই দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী।

১৯৪৭: দেশভাগ ও প্রথম যুদ্ধ

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটার পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দেশভাগের সময় ব্যাপক সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, প্রাণ হারান প্রায় ১০ লাখ মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হন প্রায় দেড় কোটি। কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত-পাকিস্তান কারো সঙ্গে সরাসরি যোগ না দিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন। পাকিস্তান-সমর্থিত বাহিনী কাশ্মীরে হামলা চালালে ভারত হস্তক্ষেপ করে এবং শুরু হয় প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ১৯৪৯ সালে যুদ্ধবিরতি হয় এবং গঠিত হয় নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC)।

১৯৬৫: দ্বিতীয় যুদ্ধ

পাকিস্তান ১৯৬৫ সালে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অভিযান চালায়, যার জবাবে ভারত সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রায় এক মাস স্থায়ী এই যুদ্ধে দুই পক্ষেই অনেক প্রাণহানি ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও তৃতীয় যুদ্ধ

পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) স্বাধীনতার দাবিতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর দমন-পীড়নের ফলে লাখ লাখ শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশের জন্ম হয়। এটাই ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সিদ্ধান্তমূলক যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।

১৯৮৯–৯০: কাশ্মীর বিদ্রোহ ও দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনা

কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী অনুভূতি থেকে শুরু হয় বিদ্রোহ। ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হয়। ভারত বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

১৯৯৯: কারগিল যুদ্ধ

কাশ্মীর সীমান্তের কারগিল অঞ্চলে পাকিস্তান–সমর্থিত গোষ্ঠী ভারতীয় সামরিক পোস্ট দখল করে নেয়। ১০ সপ্তাহের সংঘর্ষে প্রায় ১ হাজার মানুষ নিহত হন। আন্তর্জাতিক চাপ এবং পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত পিছু হটে।

২০১৯: পুলওয়ামা হামলা ও পাল্টা বিমান হামলা

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। ভারত দায় দেয় পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীর ওপর। প্রতিক্রিয়ায় ভারত যুদ্ধবিমান দিয়ে পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় একটি কথিত জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পাকিস্তান ভারতের একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামায় ও পাইলটকে আটক করে, পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

২০২৫: বর্তমান উত্তেজনা

৭ মে কাশ্মীর সীমান্তে আবারও গোলাবর্ষণের ঘটনা নতুন করে দ্বন্দ্ব উসকে দিয়েছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী কাশ্মীরে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানে। এতে উভয় পক্ষেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

দুই দেশের ইতিহাস বলছে, সাময়িক শান্তি থাকলেও মূল সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় সংঘাত প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মীরকে ঘিরে এই সংঘাত ভবিষ্যতেও পারমাণবিক উত্তেজনায় রূপ নিতে পারে, যদি না দুই পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজে।

এই প্রতিবেদন আরও বিস্তৃত বা ইনফোগ্রাফিকসহ লাগলে জানাবেন।

Leave a Comment

Footer Section