ভারতের মুসলমানদের বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় কেন

News Desk

ভারতের মুসলমানদের বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে হয় কেন. Dhakainlight.com

কাশ্মীরের পেহেলগামে গত এপ্রিলের প্রাণঘাতী হামলার পর ভারতজুড়ে মুসলিমবিদ্বেষী আচরণ নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দিল্লিভিত্তিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস জানিয়েছে, হামলার দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশজুড়ে ১৮৪টি মুসলিমবিরোধী ঘটনার তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে অর্ধেক ছিল বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বাকিগুলো ভাঙচুর, হুমকি, হয়রানি, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা।

এই পরিস্থিতি শুধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়; বরং ভারতের রাজনীতি ও সমাজে মুসলমানদের প্রতি সন্দেহ ও排除নীতিকে মূলধারায় নিয়ে আসার ইঙ্গিত। লেখক ও গবেষকরা বলছেন, ‘দেশদ্রোহী’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ কিংবা ‘মিনি পাকিস্তান’ বলেও পরিচিত মুসলিমদের অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ভারতের ভেতরে সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়ছে দেশটির মুসলমানদের ওপর। মিডল ইস্ট আইয়ে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে ভারতীয় কবি ও লেখক নাবিয়া খান এবং হুসেন হায়েদ্রি জানান, বহু দশক ধরে মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব তৈরি করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক, মিডিয়া ও রাজনৈতিক প্রচারের মাধ্যমে। এখন সেই বিদ্বেষ রাজনৈতিক মূলধারায় ঢুকে পড়েছে।

বিশ্লেষক সারা আথার বলেন, মুসলমানদের কাছ থেকে শুধু ভারতের প্রতি আনুগত্য নয়, বরং পাকিস্তানবিরোধিতা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার চাপও দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে বা সাংবাদিকদের সামনে অনেককে জোর করে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলাতে দেখা গেছে। আথার বলেন, “এটা দেশপ্রেম নয়, এটা লাঞ্ছনা।”

সম্প্রতি এক মুসলিম যুবককে সাংবাদিক ‘পাকিস্তানি’ বলে আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করলে তিনি আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় প্রতিফলিত হয়—সন্দেহই কারও জীবন কেড়ে নিতে পারে।

জাতীয়তাবাদের মোড়কে মুসলমানদের বর্জনের কৌশল আরও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিচ্ছে। তারা যেন সমাজে থাকতে পারে, তার জন্য এক ধরনের “যোগ্যতার পরীক্ষা” দিতে বাধ্য হচ্ছে। নিজেদের গ্রহণযোগ্য প্রমাণে যদি কেউ ব্যর্থ হয়, তবে তাকেই সন্দেহ, সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

এই সংকট শুধু শারীরিক সহিংসতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্ব, পরিচয় ও নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অথচ প্রকৃত প্রশ্ন হওয়া উচিত—ভারত কি মুসলিম নাগরিকদের শর্তহীনভাবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত?

একটি গণতন্ত্র তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সেটা নাগরিকদের ধর্ম, জাত বা পরিচয়ের ভিত্তিতে বাছবিচার না করে সমান মর্যাদায় গ্রহণ করে। মুসলমানদের প্রতি বারবার দেশপ্রেমের প্রমাণ চাওয়া শুধু বৈষম্যের প্রতীক নয়, এটা গণতান্ত্রিক চেতনাকেও আঘাত করে। যত দিন এ চেতনায় পরিবর্তন না আসবে, তত দিন ভারতীয় মুসলমানদেরকে সেই যুদ্ধই চালিয়ে যেতে হবে, যার দায় তাঁদের নয়।

Footer Section