বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট সিরিজ নিয়ে জোর প্রস্তুতি চললেও এখন তা ঘিরে তৈরি হয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা। সূচি অনুযায়ী, ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দল আগামী ১৩ আগস্ট বাংলাদেশে এসে তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার এখনো এই সফরের অনুমোদন দেয়নি, এমনটি জানিয়েছে বিবিসি বাংলা একাধিক শীর্ষ সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে।
দিল্লি সফরের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, রাজনৈতিক কারণেই সফরটি আটকে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক কূটনৈতিক শীতলতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লির বিরূপ মনোভাবের কারণেই ভারতীয় দলকে বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এই সফর ইতিবাচক বার্তা দেবে না বলেই মনে করছে কেন্দ্র।
যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারত-বিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। বরং ভারত-পাকিস্তান নিয়ে এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তার একটি বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরেই এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।
ভারতীয় বোর্ড বিসিসিআইও এ নিয়ে নিজেদের দ্বিধার কথা আগেই জানিয়েছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে উল্লেখ করা হয়, ভারতের পক্ষ থেকে সফরটি নিয়ে স্পষ্ট বার্তা না আসায় সংশয় আরও ঘনীভূত হয়েছে। গত ৩০ জুন বিসিবির বোর্ড সভা শেষে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত সময়েই সিরিজ আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, “ভারত যদি আগস্টে সফর না করে, তাহলে ভবিষ্যতের কোনো ফাঁকা সময়ে সিরিজটি আয়োজনের চেষ্টা করা হবে।”
আসন্ন সময়সূচি বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট ছাড়া বছরজুড়ে আর কোনো ফাঁকা সময় নেই দুই দলের মধ্যে। সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য এশিয়া কাপ, অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফর, নভেম্বরে আয়ারল্যান্ড সিরিজ, ডিসেম্বরে বিপিএল, এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যস্ত সূচির ভিড়ে ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ আয়োজনে কার্যত কোনো সুযোগই থাকবে না।
এমন বাস্তবতায় ক্রিকেট বোদ্ধারা আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের বলি হতে যাচ্ছে এক প্রতীক্ষিত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই সিরিজ ঘিরে যেভাবে উদ্দীপনায় ছিল, তা হঠাৎই অনিশ্চয়তায় ডুবে যাওয়ায় হতাশা দেখা দিয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সফর বাতিলের ঘোষণা না এলেও, দিল্লির সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও বিসিসিআইয়ের নীরব অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে, সিরিজটি নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক স্পর্শকাতরতার বিষয়টি সামনে রেখেই হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভারত সরকার।
সিরিজটি যদি বাতিল হয়, তবে তা শুধু ক্রিকেটীয় ক্ষতি নয়, বরং ক্রীড়াঙ্গনে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রিকেট কূটনীতি বরাবরই দুই দেশের সম্পর্কে নরম আবহ তৈরি করেছিল—সেই সুসম্পর্কে এবার ফাটল ধরাতে চলেছে রাজনীতি।