ব্যাংকের ৭৫% ঋণ পুঞ্জীভূত ১.২% গ্রাহক হিসাবে

News Desk

ব্যাংকের ৭৫% ঋণ পুঞ্জীভূত ১.২% গ্রাহক হিসাবে. Dhakainlight.com

দেশের ব্যাংক খাতে আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে। দেশে ব্যাংক হিসাবের শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হিসাবধারীর কাছে রয়েছে মোট আমানতের প্রায় ৪২ শতাংশ অর্থ। আর ১ দশমিক ২ শতাংশ গ্রাহকের হিসাবে রয়েছে ব্যাংকের মোট ঋণের ৭৫ শতাংশ। এই তথ্য উঠে এসেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

পিআরআই জানায়, এসব হিসাবে অন্তত ১ কোটি টাকা জমা রয়েছে। ২০১৯ সালে এ ধরনের হিসাবের মাধ্যমে মোট আমানতের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ জমা ছিল। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। দেশের ১১ হাজার ৩০০টিরও বেশি ব্যাংক শাখা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তৈরি হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

গবেষণা অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ১২৬টি উপজেলায় ব্যাংক ঋণ হিসাব কমেছে, বিপরীতে ৬০টি উপজেলায় ঋণ হিসাব বেড়েছে ১০০ শতাংশের বেশি। পুরো দেশের মধ্যে ঢাকাতেই বিতরণ হয়েছে মোট ব্যাংকঋণের প্রায় ৬৩ শতাংশ, এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম, যেখানে বিতরণ হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের ৭৮ শতাংশ ব্যাংকঋণ কেবল এই দুই জেলাতেই কেন্দ্রীভূত।

বুধবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে আর্থিক খাতের উন্নয়নের গতিধারা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। যৌথভাবে এ আয়োজন করে পিআরআই, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল গ্রোথ সেন্টার (আইজিসি)।

সেমিনারে পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়দি সাত্তারের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ঢাকায় ব্যাংকের মোট আমানতের ৫১ দশমিক ৭৯ শতাংশ জমা রয়েছে। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ রয়েছে শীর্ষে। ঢাকায় মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা, চট্টগ্রামে ২ লাখ ৬০ হাজার এবং সিলেটে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা।

পিআরআই জানায়, দেশের ৬০টিরও বেশি জেলায় মাথাপিছু আমানতের পরিমাণ ১ লাখ টাকার নিচে। তবে গত পাঁচ বছরে ৪৭টির বেশি জেলায় আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে শরীয়তপুর ও জামালপুরে সবচেয়ে বেশি—প্রায় ৯০ শতাংশ হারে আমানত বেড়েছে।

আরও দেখা গেছে, ১৯৭১ সালে দেশে ব্যাংক শাখা ছিল ১ হাজার ১৯৬টি, যা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৩৬১টিতে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংকঋণের মধ্যে শিল্প খাতে গিয়েছে ৪০ থেকে ৪২ শতাংশ এবং কৃষি খাতে ৪ থেকে ৫ শতাংশ।

সেমিনারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে পুরোপুরি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা হয়তো নির্বাচিত সরকারের কাছে আংশিকভাবে পুনর্গঠিত একটি অর্থনীতি দিয়ে যেতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যত দিন রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে না, তত দিন অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণও সম্ভব নয়। এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর।’

তিনি বলেন, বর্তমানে মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন করা। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৭ বিলিয়ন ডলার, যা শিগগিরই ৩০ বিলিয়ন ডলার ছুঁবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট। ধনী শ্রেণির পক্ষে অর্থনীতি কাজ করছে—এটা ধারণা ছিল, এখন গবেষণায় প্রমাণিত হলো।’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাত কেন ঢাকাকেন্দ্রিক, তার পেছনের রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয়গুলো বিশ্লেষণ জরুরি।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আনিস উর রহমান।


সংবাদ সংকলন: আমার মিউজ নিউজ ডেস্ক
তথ্যসূত্র: পিআরআই, বাংলাদেশ ব্যাংক

Leave a Comment

Footer Section