পৃথিবীতে কীভাবে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদটি এল, কারা এই পদ পেয়েছিলেন

News Desk

পৃথিবীতে কীভাবে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদটি এল, কারা এই পদ পেয়েছিলেন. Dhakainlight.com

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বল্পস্থায়ী অথচ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অসাধারণ নেতৃত্ব এবং দেশের স্বার্থে অবদানের জন্য তাঁকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদ দেওয়া হয়।

ইতিহাস বলছে, পাকিস্তানে সর্বশেষ ১৯৫৯ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খান ফিল্ড মার্শাল হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাবিনেট তাঁকে এই সম্মান দিয়েছিল। আইয়ুব খান ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

ফিল্ড মার্শাল একটি পাঁচ তারকাবিশিষ্ট সামরিক পদ, যা সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সম্মান। এই পদের ইতিহাস প্রায় ৮৪০ বছরের পুরোনো। ১১৮৫ সালে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্তাস জেনারেল আলবারিক ক্লেমেন্টকে বিশ্বের প্রথম ফিল্ড মার্শাল হিসেবে নিয়োগ দেন। তৃতীয় ক্রুসেডে অংশ নেওয়া এই জেনারেল ১১৯১ সালে যুদ্ধে নিহত হন।

এরপর থেকে বিভিন্ন দেশে শত শত ফিল্ড মার্শাল নিযুক্ত হয়েছেন। শুধু যুক্তরাজ্যেই ১৪১ জন এবং রুশ সাম্রাজ্যে ৬৪ জন ফিল্ড মার্শাল পদ পেয়েছিলেন।

ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল স্যাম মানেকশ, যিনি ১৯৭৩ সালে এই পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নেতৃত্বেই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয় এবং পাকিস্তান পরাজিত হয়।

ভারতের আরেকজন ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল মদাপ্পা কারিয়াপ্পা। তিনি ১৯৪৭–৪৮ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৮৬ সালে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন। দুইজনই ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা অর্জন সিং ২০০২ সালে “মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স” খেতাবে ভূষিত হন। তিনি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব দেন এবং ২০১৭ সালে ৯৮ বছর বয়সে মারা যান।

শ্রীলঙ্কায় তামিল টাইগারদের পরাজিত করার পুরস্কার হিসেবে সেনাপ্রধান সারথ ফনসেকা ফিল্ড মার্শাল হন। যদিও পরে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়, ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তাঁকে পুনরায় সেই মর্যাদা ফিরিয়ে দেন।

নেপালের রাজা বীরেন্দ্র ও মহেন্দ্রও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক ফিল্ড মার্শাল ছিলেন। ব্রিটেন বহু বিদেশি রাজাকে এই পদ দেয় কূটনৈতিক সৌজন্য হিসেবে।

তবে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের শত্রু হয়ে ওঠায় জার্মান সম্রাট উইলহেল্ম দ্বিতীয়, অস্ট্রিয়ার সম্রাট ফ্রান্স জোসেফ প্রথম এবং জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর কাছ থেকে এই পদ কেড়ে নেওয়া হয়।

ব্রিটেনে ১৮১৩ সালে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী আর্থার ওয়েলেসলি এই পদ পান। আবার চার্লস মুর ১৮২১ সালে ৯১ বছর বয়সে ফিল্ড মার্শাল হন। ব্রিটেনে ২৩ জন কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা ৮০ বছরের বেশি বয়সে এই পদ পেয়েছেন।

ব্রিটিশ রাজপরিবারেও অনেকে এই পদ পেয়েছেন—যেমন রাজা জর্জ পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, প্রিন্স চার্লস, প্রিন্স এডওয়ার্ড এবং রানি এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ। রানি ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টকে এবং রানি এলিজাবেথও একইভাবে সম্মান দিয়েছিলেন।

জেনারেল চার্লস গাথরি ২০১২ সালে এবং জেনারেল জন ওয়াকার ২০১৪ সালে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হন।

তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কও ছিলেন একজন ফিল্ড মার্শাল।

যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদ চালু না হলেও, ১৯৩৬ সালে জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারকে ফিলিপিনো সেনাবাহিনীর ফিল্ড মার্শাল বানানো হয়। পরে ১৯৪৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস “জেনারেল অব দ্য আর্মি” নামে পাঁচ তারকার একটি পদ চালু করে, যা ফিল্ড মার্শালের সমতুল্য। সেই পদে প্রথম উন্নীত হন জেনারেল জর্জ মার্শাল।

সৌদি আরবে উপসাগরীয় যুদ্ধে (১৯৯০–৯১) অবদানের জন্য বাদশাহ ফাহদ প্রিন্স খালেদ বিন সুলতানকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করেন।

বিশ্বজুড়ে ফিল্ড মার্শাল পদপ্রাপ্ত দেশের তালিকায় রয়েছে: যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র (সমতুল্য পদ), জার্মানি, ফ্রান্স, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, নেপাল, ব্রাজিল, মিসর, ইরাক, ইরান, সিরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, স্পেন, সুইডেন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, ক্রোয়েশিয়া, যুগোস্লাভিয়া, তিউনিসিয়া, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, ওমান, ভেনেজুয়েলা, ফিলিপাইন, পেরু, কম্বোডিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইথিওপিয়া, লাইবেরিয়া, আলবেনিয়া, বেলারুশ, বাহরাইন, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, জর্ডান, জাপান, আফগানিস্তান ও আরও অনেকে।

Leave a Comment

Footer Section