পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারত তাদের তিনটি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাও এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ একাধিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক মুখপাত্র। খবরটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা এএফপি নিশ্চিত করেছে।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি এক সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এটিকে সবচেয়ে গুরুতর সামরিক সংঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বুধবার থেকে টানা তিন দিন ধরে সীমান্ত অঞ্চলে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে।
ভারতের এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। এর জবাবে পাকিস্তান চালু করেছে ‘অপারেশন বানিয়ান-উন-মারসুস’। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ভারত তিনটি বিমানঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে এবং পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
যেসব বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমানঘাঁটি। এটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফরের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ভারতের হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইর এই ঘাঁটি থেকে নিজ দেশে ফিরে যান বলে জানা গেছে।
ইসলামাবাদ থেকে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। একই সময় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সশস্ত্র ড্রোন প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে এক ড্রোন হামলায় কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
পরিস্থিতির গুরুতরতায় উভয় দেশের বেসামরিক বিমান চলাচলেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ভারত উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানও শনিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজেদের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে।
এই ঘটনার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, দিল্লির এই উন্মত্ত আচরণ দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে বড় ধরনের সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তা শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তানের জন্য নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক ভয়াবহ অস্থিতিশীলতার সংকেত।